গাজার আল আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলায় গতকাল মঙ্গলবার অন্তত ৫০০ মানুষ নিহতের ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। অনেক দেশে বিক্ষুব্ধ মানুষ হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে।
এই হামলাকে মানবিক অপরাধ ও হামলাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা।
ইরান
গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনায় বুধবার ইরানে এক দিনের শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, হাসপাতালে হামলার পরিণতি ইসরায়েল ও তার মার্কিন মিত্রের বিরুদ্ধে যাবে।
আইআরএনএর প্রতিবেদনে রাইসি বরাত দিয়ে বলা হয়য়, ‘আজ সন্ধ্যায় গাজার হাসপাতালে আহত ফিলিস্তিনিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলি বোমা নিক্ষেপ করেছে। শিগগিরই এই আগুন ইসরায়েলিদেরও গ্রাস করবে।’
তেহরানে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের দূতাবাসের বাইরে হাজারো বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছে। এর আগে মধ্য তেহরানের প্যালেস্টাইন স্কয়ারে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জর্ডান
জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল এই ভয়াবহ হামলার জন্য দায়ী।
আম্মান পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থাকবেন এমন এক সম্মেলনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
এএফপির এক সাংবাদিক জানান, আম্মানে ইসরায়েলি দূতাবাস প্রাঙ্গণে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করেছে।
মিশর
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি বোমা হামলা শত শত ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি এই হামলাকে ‘ইচ্ছাকৃত’ এবং এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সৌদি আরব
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে সৌদি আরব। সেইসঙ্গে ইসরায়েলের গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে দেশটি।
ইরাক
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি এক বিবৃতিতে ‘আগ্রাসন’ বন্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ‘তাৎক্ষণিক ও জরুরি পদক্ষেপের’ আহ্বান জানিয়েছেন।
হামলায় নিহতদের স্মরণে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে ইরাক সরকার।
তুরস্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় এ ঘটনাকে ‘মৌলিক মানবিক মূল্যবোধহীন ইসরায়েলি হামলার সর্বশেষ নজির’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এরদোয়ান বলেন, ‘গাজায় এই নজিরবিহীন নৃশংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে আমি সমগ্র মানবজাতিকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
হিজবুল্লাহ
লেবাননের সংগঠন হিজবুল্লাহ মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানাতে বিক্ষোভের দিন পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘গণহত্যা’ ও ‘নৃশংস অপরাধ’ আখ্যায়িত করে বলেছে, বুধবার শত্রুর বিরুদ্ধে ‘ক্ষোভের দিন’ হোক।
গাজার হাসপাতালে হামলার প্রতিবাদে বৈরুতের আওকারে মার্কিন দূতাবাসের বাইরে শত শত বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করে। এসময় লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা ‘যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যু’ এবং ‘ইসরায়েলের মৃত্যু’ চেয়ে স্লোগান দেয়।
আরব লীগ
আরব লীগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইত বলেছেন, পশ্চিমাদের অবশ্যই অবিলম্বে এই ট্রাজেডি বন্ধ করতে হবে।
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধ নথিভুক্ত করা হয় এবং অপরাধীরা ন্যায়বিচার থেকে পালাতে পারবে না।
আফ্রিকান ইউনিয়ন
আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রধান মুসা ফাকি মাহামাত ইসরায়েলকে ‘যুদ্ধাপরাধের’ দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।
গাজায় একটি হাসপাতালে ইসরায়েলের বোমা হামলায় শত শত মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় আমাদের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই, হামলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এক্স এ লেখেন ফাকি।
কাতার
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে ‘নৃশংস গণহত্যা’ এবং ‘নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে।
এক বিবৃতিতে উপসাগরীয় দেশটি গাজায় হাসপাতালে হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ এবং ‘সংঘাতের পথে ভয়ানক এগিয়ে যাওয়া’ বলে অভিহিত করেছে।
তিউনিসিয়া
গাজায় হাসপাতালে বোমা হামলায় ৫০০ মানুষ নিহতের ঘটনায় তিউনিসিয়ায় ফরাসি দূতাবাসের সামনে মঙ্গলবার শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় যুক্তরাষ্ট্রেরও নিন্দা জানায় তারা।
বিক্ষোভকারীরা উভয় দেশের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহারের দাবি জানায় এবং শ্লোগান দেয়, ‘তিউনিসিয়ার ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দূতাবাস প্রয়োজন নেই।’
জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজার হাসপাতালে হামলা করে শত শত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যার তিনি আতঙ্কিত।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গুতেরেস অবিলম্বে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাই। যে ভয়ঙ্কর মানবিক যন্ত্রনার সাক্ষী হচ্ছি তা বন্ধ করুন।
গুতেরেস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানালেও হামলার দায় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বিস্ফোরণ এবং প্রাণহানির ঘটনায় তিনি ‘ক্ষুব্ধ ও গভীরভাবে শোকাহত’।
বাইডেন বলেন, এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আবারও নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হচ্ছে।’
‘এই অপরাধে দায়ীদের স্পষ্টভাবে জানাতে হবে এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতে আনতে হবে,’ এক্সে লেখেন তিনি।
ফ্রান্স
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, হাসপাতালে ভয়াবহ হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘দেরি না করে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে অবশ্যই সবকিছু খুলে দিতে হবে।
ডব্লিউএইচও
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রাণঘাতী হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং গাজায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে এসব কথা জানায়। ‘হাসপাতালটি চালু ছিল, রোগী, স্বাস্থ্য ও সেবাদাতা এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোকেরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। প্রাথমিক রিপোর্টে শত শত প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।’
আইসিআরসি
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, হাসপাতালগ মানুষের জীবন রক্ষার জায়গা হওয়া উচিত, মৃত্যু ও ধ্বংসের জন্য নয়।
এমএসএফ
মেডিকেল দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গাজা সিটির আহলি হাসপাতাল যেখানে রোগীদের চিকিৎসা চলছিল এবং অসংখ্য মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে বোমা হামলার ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত, বিবৃতিতে জানায় সংগঠনটি।
জাপান
জাপান সরকার আজ বুধবার গাজার হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছে বলেছে, ‘হাসপাতাল বা বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বুধবার এক বিবৃতিতে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা মনে করে ‘নিরীহ বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে চরম অন্যায় হয়েছে এবং তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’ মন্ত্রণালয় এই হামলায় নিহত, আহত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় ‘সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর হামলা এড়ানোর অনুরোধ জানায়’। টোকিও বেসামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও এ অঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে বলেও জানায় মন্ত্রণালয়।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালের ওপর চালানো হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘এটি নিশ্চিতভাবেই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।’
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘ইন্দোনেশিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অবিলম্বে উদ্যোগ নিয়ে গাজার বিরুদ্ধে আক্রমণ ও সহিংসতা বন্ধ করার অনুরোধ জানাচ্ছে।’