হামাস-ইসরাইল সংঘাতের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে ছয়টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে চীন। এ নিয়ে ব্যাপক জল্পনা তৈরি হয়েছে। ছড়াচ্ছে নানা গুজবও। তবে সেসব জল্পনা ও গুজব উড়িয়ে দিয়ে বেইজিং বলেছে, যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন মধ্যপ্রাচ্যে নিয়মিত টহল মিশন ও প্রীতি সফরের অংশ। এটা ইসরাইল-ফিলিস্তিন চলমান সংঘাতে জড়ানোর জন্য নয়।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আকস্মিক অভিযানের পর নতুন করে ফিলিস্তিন-সংঘাত শুরু হয়েছে। গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। যে হামলা এরই মধ্যে কয়েক হাজার বাড়িঘর ধ্বংস করেছে এবং পাঁচ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
এই সংঘাতের ক্ষেত্রে বিশ্ব কার্যত দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। অসম এই লড়াইয়ে ইসরাইলকেই নগ্ন সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমারা। অন্যদিকে ইসরাইলি নির্বিচার হামলার নিন্দা জানিয়ে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া।
গাজায় ইসরাইলের বিরামহীন বিমান হামলার ফলে সংঘাত এখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে ছয়টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে চীন।
চীনা সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যমের মতে, গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার জিবো, গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট জিংঝু ও কৌশলগত সহায়ক জাহাজ কিয়ানদাওহু-এই তিনটি যুদ্ধজাহাজের সমন্বয়ে গঠিত ৪৪তম নৌবহর গত ১৮ অক্টোবর কুয়েতের সুয়াইখ বন্দরে পৌঁছায়।
এছাড়া চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) নৌবাহিনী আগেই জানিয়েছিল, গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার উরুমকি, গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট লিনি ও কৌশলগত সহায়ক জাহাজ ডংপিংহু’র সমন্বয়ে গঠিত ৪৫তম চীনা নৌবহর এডেন উপসাগর ও সোমালিয়ার জলসীমায় ৪৪তম নৌবহরের সঙ্গে টহল অভিযানে অংশ নেবে।
এ নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম অব্যাহতভাবে গুজব ছড়িয়ে চলেছে। বলা হচ্ছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেঙ্গু এসব গুজব উড়িয়ে দিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমের মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের বিষয়ে ‘ভিত্তিহীন প্রচার’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার (২২ অক্টোবর) রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুটনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে লিউ পেঙ্গু বলেন, ‘চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের বহরটি একটি নিয়মিত টহল মিশনের জন্য যাত্রা করেছে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বন্ধুত্বপূর্ণ সফর করছে। এই সত্যকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং ভিত্তিহীন প্রচার বন্ধ করা উচিত।’
চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, টহল মিশনের জন্য এই অঞ্চলে একবারে তিনটি সামরিক জাহাজ পাঠানো একটা নিয়মিত ঘটনা। তবে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য যুগপৎভাবে এই অঞ্চলে একযোগে ছয়টি জাহাজ উপস্থিত থাকবে। এর সঙ্গে চলমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন: মুসলিম দেশগুলোর তেলে ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালাচ্ছে গাজায়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনও জরুরী পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে এই অঞ্চলে মোতায়েন টহল মিশনগুলো কাজে লাগাতে পারবে চীন। উদাহরণস্বরূপ, চলতি বছরের শুরুতে সুদানে সংঘাত শুরু হলে চীনা নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে চীনা নৌবহর বেশ সহায়ক হয়েছিল। এ ধরনের যেকোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে ওই সামরিক জাহাজগুলো দ্রুত কাজে যুক্ত হতে পারবে।
সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির মিডল ইস্ট স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডিং লং গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আন্তর্জাতিক বিরোধ সমাধানের ক্ষেত্রে চীন কখনই সামরিক হস্তক্ষেপ পছন্দ করবে না।’
যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন পশ্চিমা গুজব নিয়ে ডিং লং বলেন, ‘বিদেশি গণমাধ্যম ও পশ্চিমা রাজনীতিকদরা প্রথমে হামাসের নিন্দা না করার কারণে চীনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। আর এখন তারা এই অঞ্চলে চীনের নিয়মিত সামরিক টহল মিশন নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। এটা চীনকে সংঘাতে জড়িয়ে ফেলার একটা অপচেষ্টা।