গত মাসের ২ জুলাই ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে কেঁদেই চলেছেন মা ময়না খাতুন। দেড় মাস ধরে কেঁদেই যাচ্ছেন ছেলের মরদেহটা একবারের জন্য নিজ চোখে দেখতে। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তার। কবে সৌদি থেকে ছেলের মরদেহ দেশে আসবে তা নিয়ে তিনি নিশ্চিত কিছুই বলতে পারছেন না।
পরিবারের সচ্ছলতা ফিরবে এমন আশায় যশোরের শার্শার রুবেল হোসেন (২৫) গিয়েছিলেন সৌদিতে। কিন্তু গত ২ জুলাই দুপুরে তিনি কর্মস্থলে মারা যান। ২৭ জুলাই মরদেহ দেশে ফেরার কথা থাকলেও রুবেলের কফিনে কিশোরগঞ্জের মোজাম্মেলের মরদেহ চলে আসে। এতে বাঁধে জটিলতা।মরদেহের সাথে পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্রে ছিল রুবেলের নাম ঠিকানা।
নিহত রুবেল হোসেন শার্শা উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের বাগুড়ী বেলতলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র ফারুক হোসেনের ছেলে। মৃতদেহের কফিনটি বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গত ২৭ জুলাই দুপুর ২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসে স্বজনরা।
গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দেখার পরে তৈরি হয় নানা ধূম্রজাল।মরদেহটি দেখে রুবেলের মা, বাবা ও পরিবারের কেউ চিনতে পারেনি যে এটা তাদের সন্তান। পরে অনেকটা ইচ্ছার বাইরে মরদেহটি ওই দিন রাতে বাগআঁচড়া সাধারণ কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরের দিন ২৮ জুলাই সৌদি প্রবাসী কিশোরগঞ্জের মোজাম্মেল হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করে নিহতের বাড়ি কিশোরঞ্জে নিয়ে যান। সৌদির হাসপাতালের মর্গে এখনো পড়ে রয়েছে রুবেলের মরদেহ। ওখানে যে কাগজপত্র রয়েছে সেটা মোজাম্মেলের।ওই কাগজপত্রে রুবেলের মরদেহ দেশে ফেরত পাঠাতে পারছে না সৌদি প্রশাসন ও প্রবাসীরা।
রুবেল হোসেনের দিনমজুর মা ময়না খাতুন জানান, তার বড় ছেলে সৌদিতে যে বসের সাথে কাজ করতেন। কাজ কম পারায় সেই বস লাথি মারলে দুই তলা থেকে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে লাঞ্চ ফেটে নিহত হন রুবেল। এক বছর দুই মাস আগে সৌদিতে গিয়েছিলেন রুবেল। এক বছরে মাত্র এক লাখ টাকা পাঠিয়েছে। দেশে আমরা এখনো সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ আছি আশপাশের মানুষের কাছে। ঋণ শোধ হওয়ার আগেই আমার রুবেলকে লাশ হতে হলো। দায়-দেনা দিনমজুরি করে কিভাবে পরিশোধ করব। আদৌ আমার ছেলের মরদেহ পাব কি পাব না সেটাও নিশ্চিত কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন ময়না খাতুন।
নিহত রুবেলের বোনের স্বামী শহীদুল ইসলাম জানান, গত সোমবার সকালে সৌদিতে রুবেলের বসের সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন কাগজপত্র রেডি হয়ে গেছে। এ মাসের শেষের দিকে হয়তো বা মরদেহ বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা আছে। এমন একাধিকবার সময় নিয়েছে তারা। যে তারিখটা দেয় সেই তারিখে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে সময় লাগবে বলে জানানো হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
তিনি আরো জানান, মোজাম্মেলের মরদেহ নেওয়ার সময় তারাও বলছিলেন রুবেলের মরদেহ ফেরত আনার বিষয়ে সাহায্য করবেন কিন্তু তারা সেটাও করছেন না। রুবেলের মরদেহ ফেরত পেতে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তার পরিবার।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র পাল জানান, বিষয়টি আমাদের জানানোর পর আমরা ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে মরদেহটি দ্রুত ফেরত আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছি।
স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। অফিস ঢাকাতে হওয়ায় দরিদ্র এই পরিবারের পক্ষে ঢাকায় গিয়ে তদবির করাও সম্ভব নয় বলেও জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন।
সূত্র কালের কণ্ঠ