আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার শাহপুর ও সদর দক্ষিণ উপজেলার রামধনপুর সীমান্ত এলাকায় ভারত সরকার বাংলাদেশ সীমানার ১৫০ গজের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০৮৫ নম্বর পিলারের কাছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সীমান্তের নিকট বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কুমিল্লা ১০ বিজিবির সহকারী পরিচালক ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, “ভারত সরকার তাদের নিজস্ব অনুমতি নিয়ে কাজ করছে। তবে হুমকি বা ভয়ভীতির বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এমন কিছু ঘটলে আমরা বিষয়টি দেখছি।”
সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা,স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিএসএফ প্রায়ই বাংলাদেশি নাগরিকদের ‘ভাগ যা’ বলে হুমকি দেয়। অনেকেই ভয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। এক বাসিন্দা বলেন, “আমাদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা কোথাও গেলে ভয়ে থাকি।”
এদিকে, ভারতীয় পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সীমান্তের নিকট বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য এই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকায় বেড়া নির্মাণ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অনুমোদনযোগ্য নয়।
সীমান্তে বেড়া নির্মাণের যৌক্তিকতা
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত এলাকার ১৫০ গজের ভেতরে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে নিয়ে আসার পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এক স্তরের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে ভারত।
কুমিল্লা ১০ বিজিবির সহকারী পরিচালক ইমাম হোসেন বলেন, “এই বেড়া নির্মাণ হলে ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে আলাদা হয়ে যাবে। ফলে সীমান্তে মাদক চোরাচালান এবং অন্যান্য অপরাধ কমবে বলে আমরা আশা করছি।”
ভারতীয় নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া
সরেজমিনে গেলে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক জানান, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ হলে তাদের চলাচল ও জীবনযাপনে সুবিধা বাড়বে। বর্তমানে তারা সীমিত সময়ের মধ্যে গেট পারাপার করতে বাধ্য হন, যা তাদের সন্তানদের শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশিদের উদ্বেগ
অন্যদিকে, সীমান্তের বাংলাদেশি বাসিন্দারা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং বিএসএফের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, “নো-ম্যানস ল্যান্ডের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। তবুও ভারত এই বেড়া নির্মাণ করছে, যা আমাদের চলাচল ও জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলবে।”
সমাধানের প্রয়োজন
বিজিবি জানিয়েছে, এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা চলছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের কাছ থেকে দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান হওয়া সময়ের দাবি।