ইহুদী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ইউসুফ নবীর বড় ভাই ইয়াহুদা,জেরুজালেমের ইতিহাস যেন পৃথিবীরই ইতিহাস


মহাবিশ্বের অতিক্ষুদ্র পৃথিবী গ্রহের রহস্যময় অস্তিত্ব বহন করে মানবজাতি। আদি পিতামাতা আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:) ছোট ছেলে কাবিল বড় ছেলে হাবিলকে হত্যা করার পরে শীষ (আ:) জন্ম হয়। আদি মানবের দশম বংশধর নূহ (আ:) এর চার পুত্র যথাক্রমে সাম এর বংশধর সেমেটিক আরব ইহুদি, হাম এর হেমেটিক মিশরীয় ও ইরাকী, ইয়াফিস এর ইন্দো-ইউরোপীয় এবং ইয়াম নাস্তিক হওয়ায় তার মৃত্যু হয় মহাপ্লাবনে। হামের পুত্র কেনান চার হাজার খ্রিস্টপূর্বে ফিলিস্তিনে প্রথম বসতি স্থাপন করে। কেনান ফিলিস্তিনের প্রাচীন নাম সাম এর বংশধর ইব্রাহীম (আ:) এর যুগে মুশরিক, প্যাগান বা প্রকৃতি পূজারিরা বাস করতো। খ্রিস্টপূর্ব একুশ শতকে তৎকালীন মেসোপোটেমিয়ার উর নগরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মরুভূমির যাযাবর কর্তৃক শহরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে স্বপরিবারে তিনি সেখান থেকে হেরান শহরে চলে আসেন। স্ত্রী সারাহ ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের কেনানে জন্ম নেওয়া ইসাহাক (আ:) অর্থাৎ মা ও ছেলেকে তিনি জেরুজালেমে এ রেখে আসেন। ২য় স্ত্রী সাধারণ পরিবারের হাজেরা এবং তাঁর ছেলে ইসমাইল (আ:)কে মক্কার মরুপ্রান্তে আল্লাহর নির্দেশে রেখে আসেন। মজার বিষয় হলো বয়সে ইসমাইল (আ:) বড় এবং ইসাহাক (আ:) ছোট। একত্ববাদী তিনটি (ইহুদী, খ্রিস্টান ও মুসলিম) প্রতিষ্ঠিত ধর্মের জাতির পিতা ইব্রাহীম (আ:)। বিগত দুই হাজার বছর ধরে তিনটি ধর্মের মধ্যে মহাপবিত্র স্থান জেরুজালেমকে কেন্দ্র করেই রক্তপাত অব্যাহত রয়েছে। জেরুজালেমের ইতিহাস যেন তামাম দুনিয়ার ইতিহাস। ইসহাক (আ:) দম্পতির জমজ দুই পুত্র বড় পুত্র ঈস আর ছোট পুত্র ইয়াকুব (আ:)। বাবা বড় ছেলেকে আর মা ছোট ছেলেকে একটু বেশি ভালবাসতেন। মায়ের কৌশলে ইয়াকুব (আ:) বাবার কাছে বাড়তি দোয়া নিলে ঈস এর রোষাণলে পড়েন। তখন মায়ের পরামর্শে বাবার সম্মতিতে ইয়াকুব (আ:) হারানে তাঁর মামার বাড়ি চলে যান। যাবার সময় মা তাঁকে বলে দেন তাঁর মামাতো বোনকে বিয়ে করতে। ফিলিস্তিন অতিক্রম করার সময় সন্ধ্যা হলে তিনি একটি পাথরের উপরে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন স্বপ্নে দেখেন সেখান থেকে ফেরেশতারা সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে আকাশে উঠানামা করছে। আল্লাহতায়ালা তাঁকে ডেকে বললেন ইয়াকুব (আ:) আমি তোমাকে নবী বানালাম। সকালে তিনি সেই জায়গাটি চিহ্নিত করার জন্য পাথরের উপর তেল ঢেলে দিয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন আল্লাহ তাঁকে সেখানে ফিরে আসার সুযোগ দিলে সেখানেই তিনি একটা মসজিদ বানাবেন। আর সেই মসজিদই হলো মসজিদুল আল আকসা। যার ভিত্তি প্রস্তর তিনিই করেন। মামার কাছে গিয়ে ছোট মেয়ে পরমা সুন্দরী রাহেলকে বিয়ে করার সম্মতি দেন। মায়া সেই সময়ের প্রথা না ভেংগে বড় মেয়ে লাইয়াকে তাঁর সাথে বিয়ে দেন। পরবর্তীতে আবার ছোট মেয়েকেও তাঁর সাথে বিয়ে দেন। ওই সময়ে শরীয়তে একসাথে আপন দুই বোনকে বিয়ের অনুমতি ছিল। আপন দুইবোন এবং দুই দাসী (পরবর্তীতে স্ত্রী) মোট চারজনের গর্ভে ১২জন পুত্র ও কয়েকজন কণ্যা সন্তান জন্ম নেয়। ছোট স্ত্রীর দুই ছেলে ইউসুফ (আ:) ও বেনিয়ামিন। বেনিয়ামিন জন্মের সময় তাঁদের মা মারা যান এবং তাঁরা মাতৃহারা হন। নবী ইয়াকুব (আ:) স্বপরিবারে হারান থেকে কেনানে ফিরে এসে তাঁর ভাই ঈস এর সাথে মিলেমিশে বসবাস করেন। ইয়াকুব (আ:) যুক্তিসঙ্গত কারণে ইউসুফ (আ:) কে একটু বেশি ভালবাসতেন। ইয়াকুব (আ:) এর অন্য আরেকটি নাম ছিল ইসরাইল। তাঁর পরিবারের বার সন্তানকেই বলা হয় বনী ইসরাইল। বাড়তি ভালবাসা অন্য ভাইয়েরা পছন্দ করতেন না। তাই তারা বড় ভাই ইয়াহুদার (ইহুদী বংশের প্রতিষ্ঠাতা) নেতৃত্বে পিতার নিষেধ সত্ত্বেও ইউসুফ (আ:) কে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে হত্যার উদ্দেশ্যে কুয়ায় ফেলে দেয়। হিংসা ও বিদ্বেষ সেদিন থেকেই শুরু অর্থাৎ সাদা দেওয়ালে প্রথম কালো দাগ। আল্লাহর অপার মহিমায় তিনি সেদিন প্রাণে বেঁচে যান এবং মিশরীয় বণিকদের মাধ্যমে মিশরে ঠাঁই পান। নারীর ছলনায় জেলে গিয়ে মুক্তি পেয়ে প্রথমে সফল খাদ্য মন্ত্রী এবং পরে মিশরের শাসক হন। ছেলের অনুরোধে বাবা ইয়াকুব (আ:) এগার পুত্র ও কণ্যাসহ পরিবারের ৭০জন সদস্য নিয়ে কেনান থেকে মিশরে চলে যান এবং বসবাস শুরু করেন। বংশ পরম্পরায় তারা প্রভাবশালী হয়ে প্রায় ৪৫০বছর পর আল্লাহর সাথে নাফরমানি করে এবং অভিশপ্ত হয়ে ফেরাউনের গোলামে পরিণত হয়। তাদের মাঝে মুসা (আ:) আবির্ভাবে তারা উজ্জীবিত হয়। মুসা (আ:) নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং তাঁর উপর প্রথম আসমানী কিতাব হিব্রু ভাষায় তাওরাত নাযিল হয়। আল্লাহর অনুগ্রহে তাদের জীবনযাপন ভালোই চলছিল। মুসা (আ:) মৃত্যুর পর তারা তাওরাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আল্লাহপাক তাদের জন্য তালুত নামে এক রাজা নিযুক্ত করলেন। তালুতের নেতৃত্বে জেরুজালেমে দখল করার সময় বালক দাউদ (আ:) এর সাহসী ভূমিকার কারণে শত্রুপক্ষের সেনাপতি জালুতের চোখ নষ্ট হলে তারা যুদ্ধে জয়লাভ করে জেরুজালেম দখল করে। নবী দাউদ (আ:) এর উপর দ্বিতীয় আসমানী কিতাব হিব্রু ভাষায় যাবুর নাযিল হয় এবং তিনি রাজা হন। তাঁর ছেলে সোলাইমান (আ:) জেরুজালেমে থেকে সারা দুনিয়া শাসন করেন এবং মসজিদুল আল আকসা শক্তিশালী জিনদের দ্বারা পুনরায় নির্মাণ করেন। সোলাইমান (আ:) মৃত্যুর পর ইহুদীরা আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করার ফলে জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত হয়। মেসোপোটেমিয়ার দুর্র্ধষ রাজা নেবুচাঁদ নেজার (৫৮৬ খ্রিস্টপূর্ব) এর আক্রমণে জেরুজালেমে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তারা ইহুদিদের দাস বানিয়ে বেবিলনে নিয়ে যায় এবং সাথে নিয়ে যায় তাবুতে সাকিনা মানে একটি সিন্দুক যেখানে মুসা (আ:) ও সোলাইমান (আ:) মুক্তিজার লাঠি ও আংটি সহ অনেক নবীর নিদর্শন সংরক্ষিত ছিল। সেই সিন্দুক তারা খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের বিশ্বাস সেটা হাতে পেলে তারা বিশ্বজিৎ হবে। তখন থেকে প্রায় ২০০০ হাজার বছর তারা নির্বাসিত ও দাসত্ব বরণ করেছে। আল্লাহতায়ালা প্রায় ৭০ হাজারের অধিক নবী সেসময় জেরুজালেমে প্রেরণ করেছেন। ইহুদীরা হাজার হাজার নবীকে হত্যা এবং আসমানী কিতাবের আয়াতকে অস্বীকার করেছে। তারা বিশ্বাস করেন একজন মাসীহ আসবেন এবং তাদের উদ্ধার করবেন যখন ঈসা (আ:) আল্লাহর অসীম কুদরতে তাদের মাঝে জন্ম লাভ করলেন তখন তারা তাঁর মা মরিয়ম (আ:)কে ব্যাভিচারিণী বললেন। আর ঈসা (আঃ) কে বললেন জারজ সন্তান। ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) জন্ম নেন বেথেলহামে থাকার ঠিকানা নাজারেথ এবং সর্বোপরি বর্ণময় জীবন কাটিয়েছেন ক্যালভারি পর্বতে। ঈসা (আ:) জন্মস্থান খ্রিস্টানদের উপাসনাঘর এবং সমাধিস্থান গীর্জাকে কেন্দ্র করে খ্রিস্টান সমাজের কাছে জেরুজালেম পুণ্যভূমি। তাঁর নিকট তয় আসমানী কিতাব ইঞ্জিল হিব্রু ভাষায় নাযিল হয়। ইহুদিদের দেবতা সোলাইমান (আ:) এর ইবাদত গৃহের ধ্বংসপ্রাপ্ত কান্নার দেওয়ালকে কেন্দ্র করে জেরুজালেম তাদের নিকট প্রতিশ্রুতভূমি। আর মুসলমানদের নিকট প্রথম কিবলাহ ও মহানবী (সা:) মেরাজের রাতে সকল নবী রাসুল ও ফেরেশতাদের নিয়ে নিজে ইমামতি করে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের কারণে তা পবিত্রভূমি। শতাধিক নবীদের সমাধি, প্রার্থনাগার, নবী-রাসূলদের পদচারণায় পূর্ণ, নবী (সা:) বোরাকের দেওয়াল, গুণাহ মাফের স্থান, ডোম অব দ্য রব ও বায়তুল মুকাদ্দাস ইত্যাদি আরও অনেক কিছুই সেখানে বিদ্যমান। ইহুদীরা নবী ঈসা (আ:) শুধু শান্তিতেই থাকতে দেন নি বরং তাঁকে শ বিদ্ধ করে হত্যা করেন। আল কোরআনের ভাষ্যমতে ‘তিনি সেদিন মারা যান নি” আল্লাহ তাকে আসমানে উঠিয়ে নেন। তথাকথিত তাঁর মৃত্যুতে যারা খুশি হন, তারা ইহুদি আর যারা ব্যথিত হন তারা নাসারা (খ্রিস্টান)। ইসলামের ইতিহাস পাঠ করলে জানা যায় চার খলিফা উমাইয়া, আব্বাসীয়, ফাতেমিয় খিলাফতে ফিলিস্তিন মুসলমানদের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে ক্রসেড (১০৯৯-১১৮৭ পর্যন্ত খ্রিষ্টানদের দখলে) অতপর মহাবীর সালাউদ্দিন আইয়ূবী জেরুজালেমে বিজয় পতাকা উড্ডীন করেন। মুসলিম সোনালী ইতিহাস প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আস্তে আস্তে মলিন হতে শুরু করে। তুরস্কের পরাজয় ১৯১৭-১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিন বৃটিশদের দখলে ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়ানো এবং হিটলার কর্তৃক ৬০ লক্ষ ইহুদি নিধনের পর হাজার হাজার ইহুদী ফিলিস্তিনে এসে জমি ক্রয় করে বসবাস শুরু করে। জায়োনিস্ট ও ইহুদীরা ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী বেলফোর ঘোষণা অনুযায়ী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রকাশ্যে মদদে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল নামক একটা রাস্ট্র জন্মলাভ করে। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ইজরাইলকে ১৬৫টি দেশ এবং ফিলিস্তিনকে ১৩৮টি দেশ সমর্থন করে। তখন থেকেই ফিলিন্ডিন দাউ দাউ করে জ্বলছে। উদার ফিলিস্তিনিদের সরলতার সুযোগে তারা আজ সবকিছু দখলে মরিয়া। ইজরাইলের আয়তন দিনে দিনে বাড়ছে আর ফিলিস্তিনের কমছে। ইসমাইল (আ:) এর বংশের একমাত্র মহানবী (সা:)। তাঁর উপর শুধুমাত্র আরবি ভাষায় নাযিলকৃত ‘আল কোরআন’ নির্ভুল হওয়ায় ইহুদীরা তা মেনে নিতে পারেন নি। ইব্রাহিম। (আ:) এবং ইসমাইল (আ:) পিতা পুত্র মিলে কাবাঘর তৈরি করেন। বাল্যকাল থেকেই ইহুদীরা প্রিয় নবী (সা:) হত্যার চেষ্টা, খাদ্যে বিষ মেশানো এবং বাদশাহ নুরউদ্দীনের সময় নবীজির পবিত্র দেহ মোবারক চুরি করার শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। ইহুদিরা মনে করে দাজ্জালকে মাসীহ আর মুসলিম ও খ্রিস্টানরা মনে করে ঈসা (আ:) মাসীহ এসে পৃথিবী জয় করবেন। একই সময়ে ইমাম মাহাদিও এসে ঈসা (আ:) সাথে যোগ দিয়ে ইয়াজুজ-মাজুজ এর ফেতনা দূরীভূত করবেন। ধরণির বুকে ইহুদী জাতির শুরু হয়েছিল মহিমান্বিত মানুষের হাত ধরেই। মরুশহর জেরুজালেম এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য ও উত্থান পতনের প্রতিচ্ছবি। অহমিকা বা ইগোর কারণে তারা মুসলমানদেরকে শত্রু মনে করে। চলমান যুদ্ধে জয় পরাজয় থাকবে, হয়তো কিছুদিন যুদ্ধ বিরতি খানিকটা কার্যকর হবে মধ্যস্থতার সাথে কিছু চুক্তিও হতে পারে ফাতাহ বা হামাসের সাথে (প্রকাশ্যে বা গোপনে। বাঘ ও হরিণ যেভাবে সুন্দরবনে বসবাস করে ঠিক সেভাবেই ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষেরা অসম যুদ্ধে লিপ্ত হতে থাকবে, আপন বেগে চলতে থাকবে দখল আর পাল্টা দখল।

প্রকাশকঃএম এইচ, কে , উপদেষ্টা সম্পাদক,জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃনির্বাহী সম্পাদকঃ বার্তা সম্পাদকঃ সাইদুর রহমান মিন্টু এএনবি২৪ ডট নেট নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে । তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি anb24.net is one of the most popular Bangla News publishers. It is the fastest-growing Bangla news media that providesective news within the accurate and obj shortest poassible time.anb24.net intends to cover its reach throughout every district of the country, also global news of every segment such as politics, economics, sports, entertainment, education, information and technology, features, lifestyle, and columns anbnewsbd@gmail.com /mahamudulbd7@gmail.com mahamudul@anb24.net