মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে চীন ও ভারত সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। ফলে ভোট গড়িয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডে।
৩০ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফার সেই ভোট হবে। তবে ইতিমধ্যে দ্বীপরাষ্ট্রটির দ্বিতীয় দফা নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা বেড়ে গেছে আরেক দফা। দেশটির নির্বাচন ঘিওে বিশেষ করে চীন এবং ভারতের তীব্র আগ্রহ।
প্রথম ধাপে বিরোধীদলীয় প্রার্থী ও দেশটির রাজধানী মালের সাবেক মেয়র মোহামেদ মুইজু এককভাবে সর্বোচ্চ ৪৬ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন। তিনি চীনপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে, ডেমোক্রেটিক পার্টি সমর্থিত প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি ভারত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন অব মালদ্বীপের (ইসিএম) পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে স্বতন্ত্র তিনজনসহ মোট আট প্রার্থী অংশ নিলেও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে তাদের সবার অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। প্রথম ধাপে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুজনই কেবল দ্বিতীয় ধাপের ব্যালট যুদ্ধে লড়বেন।
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত ও চীন। পাশাপাশি ভারত মহাসাগরের দেশটিকে নিজের বলয়ে রেখে নজরদারি চালাতে চায় উভয় দেশ। ফলে দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারত ও চীনপন্থী প্রচারণায় সরব থাকতে দেখা গেছে প্রার্থীদেরও। আরও পড়ুন>>>মালদ্বীপে দ্বিতীয় দফায় ভোট আজ।
প্রথম ধাপের নির্বাচনে এগিয়ে থাকা প্রোগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপের (পিপিএম) নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী মোহামেদ মুইজু কট্টর চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত। ভারতপন্থী মোহাম্মদ সোলিহকে নির্বাচনে হারাতে পারলে তিনি দেশ থেকে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি উচ্ছেদ করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগরে নজরদারি কাজে ব্যবহৃত ওই ঘাঁটিতে ৭৫ জন সেনাসদস্য ও কর্মকর্তা ছাড়াও বেশকিছু নজরদারি উড়োজাহাজ ও ড্রোন রয়েছে। এছাড়া ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের আবদুল্লাহ ইয়ামিন মালদ্বীপকে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি অংশ করেছিলেন।
আরও পড়ুন>>>>>>মালদ্বীপে ৫ দিনের ছুটি শুরু।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট সোলিহ ভারতপন্থি। মালদ্বীপে ভারতের অনিয়ন্ত্রিত সেনা উপস্থিতির অনুমতি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে সোলিহের বিরুদ্ধে। ২০০০ সালের অক্টোবর থেকে ইয়ামিন মালদ্বীপজুড়ে ‘ইন্ডিয়া-আউট’ নামে ভারতবিরোধী এক সামাজিক আন্দোলনে নেমেছিলেন। তাঁর বিরোধীরা এ রকম আন্দোলনের পেছনে চীনের উৎসাহ ছিল বলে মনে করেন। তবে সলিহের শাসনামলে মালদ্বীপে যে ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রভাব বেড়েছে, সেটা ভারতীয় প্রচারমাধ্যমগুলোই নিয়মিত বলছে।
এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ইব্রাহিম সোলিহর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার কথা ছিল বিরোধীদলীয় নেতা ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের। কিন্তু গত ডিসেম্বরে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে আদালত তাকে ১১ বছর কারাদ- দিয়েছে। ফলে তার দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন মোহামেদ মুইজ্জু। আরও পড়ুন>>> ৩০শে সেপ্টেম্বর মালদ্বীপে ভারতপন্থী ও চীনপন্থী প্রার্থীদের মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে
তবে ভারত নাকি চীন, প্রকৃতপক্ষে কোন আঞ্চলিক শক্তি এ অঞ্চলটিতে প্রভাব বিস্তার করবে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটের পর তা বোঝা যাবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এগিয়ে আছে চীন। পিছিয়ে ভারত।
এবারের নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে মালদ্বীপে প্রায় ৭৯ ভাগ ভোট পড়েছে। দ্বিতীয় রাউন্ডেও এ রকম প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয়। বিগত নির্বাচনগুলোতে মালদ্বীপের মানুষ আরও বেশি সংখ্যায় ভোট দিয়েছিলেন। বিশ্বজুড়ে এবং বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নির্বাচনী ব্যবস্থার অধঃপতনের মধ্যেও মালদ্বীপে যে মানুষ এভাবে উৎসবের মনোভাব নিয়ে ভোট দিচ্ছেন, তা অভিনন্দন পাওয়ার মতো ব্যাপার।
তবে ভোটের প্রতি নাগরিকদের এত আগ্রহের মূলে রয়েছে দেশটির ভেতরে তীব্র ও তিক্ত রাজনৈতিক মেরুকরণ। এই মেরুকরণে ইন্ধন রয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তিরও। ভারত মহাসাগরে মালদ্বীপের অবস্থান বহু বিশ্বশক্তির কাছে ছোট্ট দেশটির বন্ধুমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে মালদ্বীপের চেয়ে বেশি উত্তেজনা বইছে বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে।
নির্বাচনকালে সাম্প্রতিক সংবাদগুলোতে ভারতীয় অনেক প্রচারমাধ্যম মুইজজুকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন ও চীনের ‘ছদ্ম প্রার্থী’ বলেও উল্লেখ করেছে। এ রকম অভিমত যে সলিহের পক্ষে যায়নি, সেটা ভোটের ফল থেকেই স্পষ্ট। পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে তিনি ৫৮ ভাগের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। অথচ এবার ৯ ভাগ কমে গেল। এ থেকে সাধারণভাবে মনে করা হচ্ছে, তাঁর সরকারের ভারতমুখী নীতি মালদ্বীপের সুন্নি মুসলমানেরা উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেননি।
ছোট-বড় ১৮০টি দ্বীপ নিয়ে মাত্র ৩০০ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের মোট জনসংখ্যা ৫ লাখ ২১ হাজার। জনসংখ্যার মধ্যে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪০৮ এবং নারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৪৭ জন। এবার নতুন ভোটার হয়েছে ২১ হাজার।
এবারের নির্বাচনে মোট ৫৭৪টি বুথে ভোট গ্রহণ হয়েছে, যার মধ্যে এক-চতুর্থাংশ ছিল রাজধানী মালেতে। দেশটির আইন অনুযায়ী কারাবন্দিরাও ভোট দিতে পারেন। মূল ভূখ-ের বাইরেও যেসব এলাকায় মালদ্বীপের নাগরিকদের বসবাস বেশি যেমন ভারতের কেরালা রাজ্যের ত্রিভান্দ্রুমসহ শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাজধানীতে ভোট প্রদানের সুযোগ ছিল।