রোমানিয়া থেকে অবৈধভাবে শেঙ্গেন জোনে প্রবেশের সময় ৪৩ বাংলাদেশিসহ ৬০ জন অভিবাসীকে আটক করেছে পুলিশ। ৪৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক ছাড়া আটক বাকি ১৭ জন ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের নাগরিক।
আটক বাংলাদেশিদের বয়স ২১ থেকে ৩৬ বছর। তারা বৈধপথে কাজের অনুমতি নিয়ে রোমানিয়া আসেন। সেখান থেকে অবৈধভাবে শেঙ্গেনভুক্ত দেশ হাঙ্গেরি প্রবেশ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন।
পৃথক দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশ। পুলিশের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ইনফোমাইগ্রেন্টসে উল্লেখ করা হয়, গত ২৭ নভেম্বর ভোর সাড়ে চারটার দিকে ভারসান্ড বর্ডার পয়েন্ট কর্মরত সীমান্তরক্ষীরা ২২ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করেছেন। তারা অনিয়মিত পথে হাঙ্গেরি সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। অভিবাসীদের সবাই সীমান্তের উগ্রিন জোনে রাখা একটি গাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন।
২২ অভিবাসীর মধ্যে আটজনের একটি দলকে এক রোমানিয়ান নাগরিকের গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। রোমানিয়ায় নিবন্ধিত গাড়িটি নিয়ে সীমান্ত ছেড়ে যেতে ভারসান্ড বর্ডার পয়েন্টে হাজির হয়েছিলেন গাড়িচালক। তিনি রোমানিয়া-ইতালি যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন। ওইসময় গাড়ির ভেতর থেকে আট জনকে খুঁজে বের করে পুলিশ।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানা গেছে, আট অভিবাসীর সবার বয়স ২১ থেকে ৩৬ বছর। তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের সবাই কাজের অনুমতি নিয়ে নিয়মিত পথে রোমানিয়ায় এসেছেন।
অন্যদিকে ওই দিনই টার্নু বর্ডার পুলিশ সেক্টরের কর্মকর্তারা সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে আরেকটি অভিযান চালায়। ওই সময়, কয়েকজন লোককে হাঙ্গেরির দিকে হেঁটে যেতে দেখলে বাধা দেয় পুলিশ। এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ১৪ জন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসী। তারা পাকিস্তান এবং নেপালের নাগরিক। সীমান্ত এলাকায় হাঁটার বিষয়ে কোনো গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে পারেননি তারা।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) আরেকটি বিজ্ঞিপ্তিতে সীমান্ত পুলিশ জানায়, দুটি আলাদা অভিযানে আরাদ অঞ্চলের নাদলাক-২ এবং বোরস-২ সীমান্ত থেকে ৩৮ জন অভিবাসীকে আটত করা করেছে স্থানীয় সীমান্তরক্ষীরা।
এতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ভোররাত তিনটায় নাদলাক-২ বর্ডার পয়েন্টে একজন তুর্কি নাগরিক তুরস্কে নিবন্ধিত একটি গাড়ি নিয়ে সীমান্ত আসেন। তিনি তুরস্ক-নরওয়ে রুটে গ্যালভানাইজড স্টিলের পণ্য পরিবহনের কথা জানান। কিন্তু গাড়িটি চেক করার পর কার্গোর ভেতর থেকে ১৪ জন ব্যক্তিকে বের করে আনে পুলিশ ও শুল্ক কর্মকর্তারা।
নথি চেক করার পর গাড়ির ভেতরে থাকা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তাদের বয়স ২০ থেকে ৪১ বছরের মধ্যে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় অভিযানটি পরিচালিত হয় বোরস-২ বর্ডার ক্রসিং পয়েন্টে। সেখানে আসা একটি গাড়িকে সন্দেহ হলে যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেয় সীমান্ত কর্তৃপক্ষ। একজন লিথুয়ানিয়ান নাগরিক লরিটি চালাচ্ছিলেন।
সীমান্তরক্ষীরা এক পর্যায়ে কার্গো বগিতে লুকিয়ে রাখা ২১ জন বিদেশি নাগরিককে খুঁজে পান। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, তাদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। সবশেষ অভিযানটি পরিচালিত হয় দেশটির মাইকেল ভ্যালিতে। ওই সময় স্থানীয় সীমান্তরক্ষীরা সীমান্ত থেকে তিনজন ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিককে আটক করেন।
সোম ও মঙ্গলবার আটক হওয়া অভিবাসীদের সবার বিরুদ্ধে বেআইনি উপায়ে রোমানিয়া ছাড়ার চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করার কথা রয়েছে। আর গাড়ির চালকদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের আইনি অভিযোগ দায়ের করবে পুলিশ। আইনি প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট বিচারিক পদক্ষেপ ঘোষণা করবে কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের শুরু থেকে বেআইনি উপায়ে রোমানিয়া থেকে শেঙ্গেন জোনে প্রবেশের দায়ে কয়েকশ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেক অভিবাসীকে বিশেষ চার্টার ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়
মতিউর রহমান মুন্না,গ্রিস থেকে