
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গের সামনে গতকাল বৃহস্পতিবার লাশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মকবুলের স্বজনরা। তার স্ত্রী হালিমা তখন মর্গের সামনে বসেই আট বছরের মেয়ে মিথিলাকে মোবাইলে বাবার ছবি দেখাচ্ছিলেন।
আর কিছুক্ষণ পরপরই বিলাপ করে বলছেন—‘তুমি কেন গেছিলা ওইখানে, তোমারে মরণে বুঝি টাইন্যা নিছে’। বাবার নির্মম মৃত্যুর পর এখন মিথিলার ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
গত বুধবার বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে দলটির নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষে আহত হন মোহাম্মদ মকবুল হোসেন। সেখান থেকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে ছররা গুলির (রাবার বুলেট) চিহ্ন ছিল।পরে মকবুলের লাশ জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. সোহেলী মঞ্জুরী তন্নী ময়নাতদন্ত করেন।
মকবুলের স্বজনরা জানান, তিনি রাজধানীর পল্লবীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তবে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তেমন জড়িত ছিলেন না। স্ত্রী- সন্তানসহ বাউনিয়া বাঁধ এলাকায় লালমাটি এ ব্লকের টিনসেট কলোনিতে একটা বাসায় থাকতেন। বাসার কাছেই তাদের বুটিকের কারখানা ছিল। সেখানেই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। মকবুলের একটি আট বছর বয়সী মেয়ে রয়েছে, তার নাম মিথিলা। সে একটি মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবার মৃত্যুতে এখন মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মকবুলের স্ত্রী হালিমা আক্তার বলেন, ‘সকালে কারখানার মাল কিনতে পুরান ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। এ জন্য তার বোনের কাছ থেকে টাকা ধার নেন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বলেছিলেন, দুপুরে বাসায় ফিরে খাবার খাবেন। কিন্তু তার আর বাসায় ফেরা হয়নি। সে তো রাজনীতি-মারামারির মধ্যে যায় না, কে যে তারে নিয়া গেল জানি না।’
মকবুলের মা কালবেলাকে জানান, এসএসসি পাস করার পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা শুরু করে মকবুল। বিয়ের পর বুটিকের কারখানা দেয়। সারা দিন সেখানেই পড়ে থাকত। সপ্তাহে যা মালপত্র তৈরি হতো তা বৃহস্পতিবার রাতে সাভার গিয়ে ডেলিভারি দিয়ে আসে। শুক্রবার এসে কারখানার কর্মচারীদের বেতন মেটায়। এর বাইরে রাজনীতি করার মতো সময় ছিল না তার। কিন্তু সেদিন কীভাবে বা কার সঙ্গে মকবুল নয়াপল্টনে গেছে তারা জানেন না।
মকবুলের মেজ ভাই নূর হোসেন কালবেলাকে বলেন, মিরপুরের বাসায় জানাজা শেষে মকবুলকে কালশী কবরস্থানে দাফন করা হবে। আমার ভাইয়ের রাজনীতি নিয়ে তেমন কোনো মাতামাতি ছিল না। তবে সে বিএনপিকে সমর্থন করত। এ জন্য তাকে মরতে হয়েছে। এই রাজনীতিই তাকে নিয়ে গেল। আমরা এর বিচার চাই।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি মকবুলের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং তাকে কিছু আর্থিক সহায়তা দেন।
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক কালবেলাকে বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক মকবুলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তার দাফন থেকে শুরু করে পরিবারের সব সহযোগিতা আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং দল থেকে করা হবে।
এএনবি২৪ ডট নেট নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে । তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি কালবেলা