১৮ থেকে ২৫ লাখ পর্যন্ত খরচ করে ভাগ্যে জুটেছে কারাবাস ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন অধরা

ইতালি যাওয়া যেন স্বপ্নই থেকে গেলো তাদের। ১৮ থেকে ২৫ লাখ পর্যন্ত খরচ করে ভাগ্যে জুটেছে কারাবাস আর নির্যাতন। ফেরত আসতে হয়েছে বাড়িতে। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বিভীষিকাময় কিছু স্মৃতি।

সহায়-সম্বল বিক্রি করে কেউ হয়েছেন সর্বস্বান্ত। অনেকের মাথায় ঋণের বোঝা। পৃথিবীটাই যেন এখন তাদের কাছে অন্ধকার হয়ে গেছে। বলছিলাম লিবিয়া ফেরত হবিগঞ্জের ২৩ যুবকের কথা।

এমনই এক যুবক সদর উপজেলার রিচি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মতিনের ছেলে আতাউর রহমান। বেশ কিছুদিন ধরেই বিদেশে যাওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন তিনি। একজনের সঙ্গে চুক্তি করেন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি পাঠাতে ব্যর্থ হন। টাকা, পাসপোর্ট ফেরত আনতে গেলে ওই ব্যক্তি ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজি হয়ে যান। চুক্তি হয় ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।

তিউনিসিয়া হয়ে ইতালি পাঠানোর কথা ছিল আতাউরকে। কিন্তু চুক্তি ঠিক রাখেননি ওই ব্যক্তি। গত ১৫ জানুয়ারি আতাউরকে পাঠানো হয় দুবাই। সেখান থেকে তিউনিসিয়া না পাঠিয়ে পাঠানো হয় লিবিয়ায়। ততক্ষণে আর কিছুই করার ছিলনা বাংলাদেশি এ যুবকের।

লিবিয়া গিয়েই আতাউর রহমান বন্দি হন মাফিয়া চক্রের হাতে। চক্রটির সদস্যরা সবাই বাঙালি। তাদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে ছাড়া পান। এরপর থেকে দফায় দফায় বন্দি হন। বারবারই টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। হয়েছেন অমানবিক নির্যাতনের শিকার।

বন্দি থাকাকালে ঠিকমতো খাবার পাননি এ যুবক। শেষ পর্যন্ত প্রায় মাসখানেক আগে লিবিয়ায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ২২ লাখ টাকা খরচ করে শেষমেশ কিছুদিন আগে লিবিয়ার কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে দেশে ফেরেন আতাউর রহমান।

আতাউর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আগে জানতাম না অনেক কম টাকায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বৈধভাবেই যাওয়া যায়। হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়াই আমার ভুল হয়েছে। যারাই অবৈধভাবে ইউরোপে যেতে চান তারা কখনো আমাদের মতো ভুল করবেন না।’

যারা বিদেশে যেতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখে এসেছি। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে এতো টাকা খরচ করার কোনো যুক্তি নেই। অনেক কম টাকা খরচ করে বৈধ পথে যান। তবুও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যাবেন না।’

লিবিয়া ফেরত অপরজন হলেন একই গ্রামের তাহির মিয়ার ছেলে সামছু মিয়া। তিনি জানান, সাড়ে ৭ লাখ টাকায় তাকে ইতালি পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু লিবিয়ায় নেওয়ার পরই তিনি মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দি হন। দফায় দফায় বন্দি হয়ে ছাড়া পেতে গিয়ে ১৮ লাখ টাকা খরচ করেন। শেষ পর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে দেশে ফেরেন। তার মতো ভুল যেন কেউ না করেন সে আহ্বান জানান এ যুবক।

রিচি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, কয়েক বছর ধরে আমাদের এলাকার কিছু যুবক অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। একজনকে দেখে আরেকজন উৎসাহিত হচ্ছেন। কিন্তু ইউরোপে যেতে গিয়ে যারা ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যাচ্ছেন তাদের বিষয়টি তারা দেখেন না।

তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো কেউ যেন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে এভাবে অবৈধ পথে বিদেশে না যায়। এতে তাদের লাখ লাখ টাকা যেমন খরচ হয়, তেমনি মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। অথচ বৈধ পথে অনেক দেশে যাওয়া যায়। টাকাও অনেক কম লাগে।’

লিবিয়া ফেরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়ে হবিগঞ্জের ২৩ যুবক সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। এসব যুবক দালালের খপ্পরে পড়ে সেখানে গিয়ে বাড়িঘর বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এখন তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

তারা আরও জানান, দালাল চক্র তাদের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ থেকে সাড়ে ১০ লাখ টাকায় ইতালি পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু প্রত্যেকেই দিয়েছেন ১৮-২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। দালালরা তাদের মাফিয়াদের হাতে তুলে দেন। মাফিয়ারাও বাংলাদেশি নাগরিক। তারা নির্যাতন করেন আর বলেন, বাড়িতে বল লিবিয়ানরা নির্যাতন করছে। কিন্তু লিবিয়ানরা এসবের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকেন না।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩০-৩৫ লাখ টাকা খরচ করে অনেকে ইতালি পৌঁছেছেন। আবার অনেকেই ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছেন।

সম্প্রতি লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বাড়ি ফিরেছেন শহরের পুরান মুন্সেফী এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে শাহজালাল শিবলু, সদর উপজেলার লুকড়া ইউনিয়নের গজারিয়াকান্দি গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া, রিচি গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে আতাউর রহমান, একই গ্রামের তাহির মিয়ার ছেলে সামছু মিয়া, ফান্দ্রাইল গ্রামের তকছির মিয়ার ছেলে জিয়াউর রহমান, লাখাই উপজেলার কাটিহারা গ্রামের হাদিছ মিয়ার ছেলে রেজাউল আহমেদ, জিরুন্ডা গ্রামের কামাল মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান, একই গ্রামের হাজী রঙ্গু মিয়ার ছেলে শেখবুল মিয়া, সিংহগ্রামের সমুজ আলীর ছেলে সাব্বির আহমেদ, তেঘরিয়া গ্রামের মিন্টু মিয়ার ছেলে মোরশেদ মিয়া ও বামৈ নোওয়াগাও গ্রামের আলী আজগরের ছেলে মনির হোসেন।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি বলেন, আমরা সবসময়ই বলি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ছাড়া কেউ যেন বিদেশে না যান। প্রবাসী কল্যাণ সেলের মাধ্যমেও তাদের সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও অনেকেই বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। শর্টকাট বিদেশে যেতে রওয়ানা হয়ে বিপদে পড়েন। পরে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আমরা মামলা নিয়েছি। অনেককে বিদেশ থেকে ফেরতও এনে দিয়েছি। তাদের বোঝানো হচ্ছে তারা যেন শর্টকাট গিয়ে বিপদে না পড়েন।

জাগো নিউজ

প্রকাশকঃএম এইচ, কে , উপদেষ্টা সম্পাদক,জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃনির্বাহী সম্পাদকঃ বার্তা সম্পাদকঃ সাইদুর রহমান মিন্টু এএনবি২৪ ডট নেট নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে । তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি anb24.net is one of the most popular Bangla News publishers. It is the fastest-growing Bangla news media that providesective news within the accurate and obj shortest poassible time.anb24.net intends to cover its reach throughout every district of the country, also global news of every segment such as politics, economics, sports, entertainment, education, information and technology, features, lifestyle, and columns anbnewsbd@gmail.com /mahamudulbd7@gmail.com mahamudul@anb24.net