এক বছরের শিশু পুত্রকে নিয়ে ভারতের উত্তরপ্রদেশে স্বামীর খোঁজে ছুটে গেলেন বাংলাদেশি এক নারী। তার ইচ্ছা জীবনের বাকি দিনগুলি স্বামীর সাথেই কাটাবেন।
সোনিয়া আক্তার নামে এই বাংলাদেশি নারী গত ৮ দিন ধরে ভারতের নয়ডায় অবস্থান করছেন। তার দাবি নয়ডার বাসিন্দা সৌরভ কান্ত তিওয়ারি কর্মসূত্রে বাংলাদেশ থাকাকালীন তাকে বিয়ে করেন। কিন্তু তারপরেও সোনিয়াকে নিজের স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে রাজি নয় সৌরভ।
জানা গেছে, তিন বছর আগে কর্মসূত্রে বাংলাদেশে যান নয়ডার সৌরভ। ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন সৌরভ। তখনই পরিচয় হয় সোনিয়ার সাথে।
পরে ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল ইসলাম ধর্ম মতে দুজনের বিয়ে হয়। সৌরভ নিজের হিন্দু ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। অভিযোগ, স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পরই ব্যক্তিগত কাজের কথা বলে নয়ডায় চলে আসেন সৌরভ। যদিও কাজ সেরে ফের ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল সৌরভ।
কিন্তু পূর্ব কথামতো ঢাকায় ফিরে না যাওয়ার কারণে সৌরভের মোবাইলে ফোন করতে থাকেন সোনিয়া। যদিও ওই ফোন আনরিচেবল বলা হয়। এরপরই ভিসা নিয়ে ভারতে আসার পরিকল্পনা নেয় সোনিয়া আক্তার। বর্তমানে সন্তানসহ সোনিয়াকে পাঠানো হয়েছে নয়ডার সেক্টর-৬২ এলাকায় একটি ডিটেনশন সেন্টারে।
ইতিমধ্যেই নয়ডা পুলিশ কমিশনারেটের উইমেন সেলের তরফে সৌরভ এবং সোনিয়ার মধ্যে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি।
এদিকে সোমবার (২১ আগস্ট) নয়ডার স্থানীয় একটি থানায় সৌরভের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে সোনিয়া জানিয়েছেন সৌরভ তাকে ত্যাগ করে অন্য আরেক নারীর সাথে সংসার করছেন। সেই পক্ষের দুটি সন্তানও রয়েছে সৌরভের। বিষয়টিতে পুলিশের হস্তক্ষেপ চেয়ে সোনিয়া জানায় ‘আমার নাম সোনিয়া আক্তার। আমি একজন বাংলাদেশী নাগরিক। ৩ বছর আগে সৌরভ ও আমি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। আমি চাই আমার স্বামী আমাকে এবং আমার সন্তানকে গ্রহণ করুক।’
সোনিয়া আরো জানায়, ‘আমি আমার জীবনের বাকি দিনগুলি স্বামীর সাথে থাকতে চেয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছি। আমাদের একটা ছোট্ট সন্তান আছে। কিন্তু সৌরভ আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
বাংলাদেশি এই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সোনিয়ার বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখছে পুলিশ।
নয়ডার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (আইনশৃঙ্খলা) আনন্দ কুলকার্নি জানান ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা এক নারীর দায়ের করা একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তদন্তের জন্য সেই অভিযোগটি ইতিমধ্যেই রাজ্যের নারী ও শিশু সুরক্ষা বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ‘টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ওই বাংলাদেশি নারী তার সন্তানকে নিয়ে ভারতে এসেছেন। ভিসা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্যই আমাদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে যেখানে তাদের বিয়ে হয়েছিল সে সমস্ত নথিও জমা পড়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং এর সত্যতাও যাচাই করে দেখা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, দেড় মাস আগেই অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে সীমা হায়দার নামে এক পাকিস্তানি নাগরিককে আটক করে নয়ডার পুলিশ। জানা যায় ২০২০ সালে পাবজি গেমের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক সচীন মিনার সাথে পরিচয় হয় পাকিস্তানি নারী সীমা হায়দারের। এরপর প্রেম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দুজনের যোগাযোগ শুরু হয়।
ভারতীয় প্রেমিকের টানে চার সন্তানকে (যাদের সকলেরই বয়স সাত বছরের নিচে) নিয়ে গত ১৫ মে অবৈধভাবে নেপাল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের অভিযোগ ওঠে সীমার বিরুদ্ধে। পরে গত জুন মাসেই সীমাকে বিয়ে করেন সচীন এবং পাকিস্তানি ওই নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন সচীন। এরপর অত্যন্ত গোপনে গ্রেটার নয়ডার রাবুপুরা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে গোপনে বসবাস শুরু করে তারা।
পরবর্তীতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের সীমা এবং তাকে সহায়তা করার অভিযোগে সচীনকে ৪ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয় আদালতের নির্দেশে জেল জরিমানাও হয় তাদের। যদিও ৭ জুলাই আদালতের নির্দেশেই জামিনও পেয়ে যান তারা।
কিন্তু এরই মধ্যে অভিযোগ উঠে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই’এর হয়ে ভারতে এসেছেন সীমা হায়দার। গোটা বিষয়টি সামনে আসার পরেই আলাদা আলাদা ভাবে তদন্তে নামে নয়ডা পুলিশ এবং সন্ত্রাস দমন শাখা।
তবে ভারতীয় নাগরিক সচীন মীনা পাকিস্তানি নারী সীমা হায়দারকে গ্রহণ করলেও, নয়ডার বাসিন্দা সৌরভ বাংলাদেশী নারীর সোনিয়ার মধ্যে কোন বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল কিনা, বা থাকলেও সোনিয়াকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নেবেন কিনা তা এখন সময়ই বলবে।