রেমিট্যান্স প্রবাহে ফের উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের মতো নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতেও রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।
চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম ২০ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১৩১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার (১.৩১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। প্রতি ডলারের জন্য ১০৭ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ হিসাবে এই ২০ দিনে মোট ১৪ হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে রেমিট্যান্স প্রবাহের তথ্য ঘেটে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের ছয় মাস ২০ দিনে (২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত) ১ হাজার ১৮০ কোটি ৮৫ লাখ (১১.৮১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১৭০ কোটি (১.৭০ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন, যা ছিল চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৪ কোটি ডলার। অক্টোবর ও নভেম্বরে এসেছিল যথাক্রমে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ও ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার। হিসাব করে দেখা যায়, এই চার মাসে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ডলারের কম রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে অবশ্য ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল।
নতুন বছরের প্রথম মাসের ২০ দিনে যে হারে রেমিট্যান্স এসেছে, মাসের বাকি ১১ দিনে সেই হারে এলে জানুয়ারিতে রেমিট্যান্সের পরিমাণ জুলাই ও আগস্ট মাসের মতো ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। মার্চের শেষের দিকে রমজান মাস শুরু হবে। রোজা এবং ঈদকে সামনে রেখে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
এই ২০ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৭ কোটি ৫১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১১০ কোটি ডলার। আর ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫০ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
ক্যালেন্ডার বছরের হিসাবে ২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সোয়া কোটি প্রবাসী ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সব মিলিয়ে ২ হাজার ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ (২১.২৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। ২০২১ সালে ২ হাজার ২০৭ কোটি ২৫ লাখ (২২.০৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
গত বছর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ লোক কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে গেছেন, যা আগের বছরের চেয়ে ৮৬ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ বিদেশ গেলেও টাকা এসেছে কম।
জনশক্তি রপ্তানিকারক, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় একটু বেশি টাকা পাওয়ায় প্রবাসীরা অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোয় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স বেশ খানিকটা বেড়েছে। এই মাসে ১৭০ কোটি (১.৭০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে বেশি ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।
আগের তিন মাস নভেম্বর, অক্টোবর ও সেপ্টেম্বরে এসেছিল যথাক্রমে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ, ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ এবং ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। তার আগের দুই মাসেই ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। জুলাই মাসে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার; আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১ হাজার ৪৯ কোটি ৩২ লাখ (১০.৪৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ১০ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। চলতি অর্থবছরের ছয় মাস ২০ দিনে (২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত) ১ হাজার ১৮০ কোটি ৮৫ লাখ (১১.৮১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা বাধাবিপত্তির মধ্যেও জনশক্তি রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ২০২২ সালের জনশক্তি রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, গত বছরে সব মিলিয়ে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন লোক কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে গেছেন। এর আগে কোনো বছরে এত লোক কাজের সন্ধানে বিদেশে যাননি।