মালদ্বীপের রাজধানীতে শিশুদের মধ্যে হঠাৎ করে ডায়রিয়া ও বমির প্রাদুর্ভাবের কারণে হাসপাতালগুলো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে
জনসাধারণকে ঘন ঘন হাত ধোয়া সহ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার জন্য পরামর্শ দেন।
ডায়রিয়া ও বমি উপসর্গে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের বমি প্রতিরোধের জন্য ওষুধ এবং তরল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
স্থানীয় মিডিয়া;
ছোট শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পর্যন্ত সবাইকেই এই দুটি সমস্যা প্রায়ই ভোগায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জীবাণু পেটে ঢোকার কারণে এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয় আর কয়েকদিনের মাঝেই সেরে উঠে।
ডায়রিয়া ও বমি একসাথে হলে যে পরামর্শ, শুধু ডায়রিয়া অথবা শুধু বমি হলেও একই পরামর্শ।
ডায়রিয়ার লক্ষণ: ডায়রিয়া হয়েছে কীভাবে বুঝবেন?
নরম পায়খানা বা পানির মত পাতলা পায়খানা দিনে তিন বা তার বেশী বার হলে সেটাকে ডায়রিয়া বলে। তবে আপনার যদি কোন কারণে পায়খানা এমনিতেই নরম বা পাতলা হয়, তবে দিনে স্বাভাবিকভাবে যতবার পায়খানা হয়, তার চেয়ে বেশী বার হলে সেটা ডায়রিয়া ধরে নিবেন।
যে শিশুরা বুকের দুধ পান করে, তাদের পায়খানা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা নরম আর আঠালো হয়। সেটা ডায়রিয়া নয়।
ডায়রিয়া ও বমির ঘরোয়া চিকিৎসা
সাধারণত আপনি নিজেই বাসায় বসে নিজের অথবা নিজের শিশুর চিকিৎসা করতে পারেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল পানিশূণ্যতা এড়াতে প্রচুর পরিমাণে তরল পানীয় ও খাবার খাওয়া।
যা যা করবেন:
বাসায় থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিবেন।
প্রচুর পরিমাণে তরল পানীয় ও খাবার খাবেন, যেমন পানি, খাবার স্যালাইন, চিড়ার পানি, ভাতের মাড়, কিংবা ডাবের পানি। ভাতের মাড়ে সামান্য লবণ দিতে পারেন। বমি ভাব হলে ছোট ছোট চুমুকে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
বাজার থেকে কেনা ফলের জুস, কোমল পানীয়, কফি, চিনি দেয়া চা পরিহার করবেন। কারণ এসব খেলে ডায়রিয়া আরো খারাপ হতে পারে।
যখনই মনে হবে খেতে পারবেন, তখনই খেয়ে নিবেন।
নির্দিষ্ট কোন খাবার খাওয়ার প্রয়োজন নেই। যেমন, এমন ধারণা প্রচলিত আছে যে ডায়রিয়ার রোগী সাদা ভাত আর কাঁচকলা ছাড়া আর কিছুই খেতে পারবে না। এই ধারণা টা সঠিক নয়।
প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৫০-১০০ মিলি তরল পানীয় খাওয়াবেন, ২ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের ১০০-২০০ মিলি তরল পানীয় খাওয়াবেন আর ১০ বছরের বেশী বয়সী শিশু এবং বড়দেরকে তরল পানীয় খাওয়াবেন যতটুকু তারা খেতে পারে।
শিশুকে বুকের দুধ বা বোতলের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাবেন। শিশু বমি করলে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়াতে পারেন।
ফর্মুলা বা শক্ত খাবার খাচ্ছে এমন শিশুদের দুই বেলা খাবারের মাঝে ছোট ছোট চুমুকে পানি খাওয়াবেন।
শিশুকে প্রতি তিন-চার ঘণ্টা পর পর খাওয়াবেন। একবারে অনেক বেশী খাবার না দিয়ে বার বার অল্প অল্প করে খাওয়ানো শ্রেয়।
বাচ্চাদের ফর্মুলা যে পরিমাণে নির্দেশনা দেওয়া আছে, সেভাবেই বানিয়ে খাওয়াবেন। তার চেয়ে পাতলা ফর্মুলা বানিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াবেন না।
অস্বস্তি বোধ করলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। শিশুকে ওষুধ দেওয়ার আগে ওষুধের সাথে থাকা নির্দেশিকা ভালো মত পড়ে নিবেন আর অবশ্যই বয়স অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে ওষুধ খাওয়াবেন।
ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতে এবং তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে ডাক্তারের পরামর্শে শিশুকে জিঙ্ক ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়াতে পারেন। সাধারণত ১০ থেকে ১৪ দিন জিঙ্ক খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ডায়রিয়া বন্ধ করার ওষুধ দিবেন না।
১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের অ্যাসপিরিন (aspirin) আছে এমন ওষুধ দিবেন না। খেয়াল করে দেখবেন ওষুধের নামের নিচে ছোট করে “aspirin” শব্দটি লেখা আছে কি না।
ঘরে বসে কীভাবে খাবার স্যালাইন বানাবেন?
এক লিটার পানি
আধা চা চামচ লবণ
ছয় চা চামচ চিনি (চামচের উপরে চিনি নিয়ে সমান করে নিবেন, যাতে পরিমাপ ঠিক থাকে।)
দোকান থেকে খাবার স্যালাইন কিনলে প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করবেন।
ডায়রিয়া ও বমি কতদিন থাকতে পারে?
প্রাপ্তবয়স্ক ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত
৫-৭ দিনের মধ্যে ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
১-২ দিনের মধ্যে বমি বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদের মাঝে ডায়রিয়া ও বমি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আপনি কী করবেন?
বমি বা ডায়রিয়া সেরে যাওয়ার পরে কমপক্ষে দুই দিন বাসায় থাকবেন। স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাবেন না। নাহলে অন্যদের মাঝেও বমি বা ডায়রিয়া ছড়িয়ে যেতে পারে।
ডায়রিয়া ও বমি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যা করবেন:
বারবার সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুবেন।
পায়খানা কিংবা বমির সংস্পর্শে এসেছে এমন কাপড় বা বিছানার চাদর গরম পানি দিয়ে আলাদাভাবে ধুয়ে ফেলবেন।
পানির কল, দরজার হাতল, টয়লেট সিট, ফ্লাশের হাতল, জীবাণুর সংস্পর্শে আসতে পারে এমন জায়গা প্রতিদিন পরিষ্কার করবেন।
অসুস্থ অবস্থায় যা যা করবেন না:
যদি সম্ভব হয়, অন্যদের জন্য রান্না করা থেকে বিরত থাকুন।
আপনার থালা-বাসন, ছুরি-চামচ, গামছা-তোয়ালে, জামা-কাপড় কারো সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।
লক্ষণগুলো চলে যাবার পর ২ সপ্তাহ পার হওয়ার আগে সুইমিং পুলে নামবেন না।
ডায়রিয়া হলে কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন?
এক বছরের কম বয়সী শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে আপনি চিন্তিত বোধ করেন
পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দেয় – যেমন আগের তুলনায় কাঁথা, ন্যাপি বা ডায়াপার কম ভেজাচ্ছে
শিশু বুকের দুধ, বোতলের দুধ কিংবা ফর্মুলা খাওয়া কমিয়ে দেয়
খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরেও যদি আপনার অথবা আপনার ৫ বছরের বেশি বয়সী শিশুর মধ্যে পানিশূন্যতার লক্ষণ থেকে যায়
আপনার অথবা আপনার শিশুর যদি পায়খানার সাথে রক্ত যায় বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত যায়
যদি ২ দিনের বেশি সময় ধরে বমি বা ৭ দিনের বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া থাকে
ডায়রিয়া হলে কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?
জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যাবেন যদি আপনার অথবা আপনার শিশুর:
বমির সাথে রক্ত আসে অথবা কফি দানার মত কালচে বাদামী রঙের কিছু আসে
সবুজ বা হলুদ (পীত) রঙের বমি হয়
ঘাড় শক্ত হয়ে যায় আর উজ্জ্বল আলোর দিকে তাকালে চোখে ব্যথা হয়
হঠাৎ করেই প্রচণ্ড মাথাব্যথা বা পেটে ব্যথা হয়
বারবার বমি হয়, পেটে কিছু রাখতে না পারে
বিষাক্ত কিছু গিলে ফেলে
খুব অসুস্থ বোধ হয়
প্রচণ্ড বা তীব্র ব্যথা বলতে আমরা যা বুঝি:
সারাক্ষণ থাকে, এবং এতটাই তীব্র হয় যে কোন কিছু বলা বা চিন্তা করা যায় না
ঘুমানো যায় না
নড়াচাড়া করা, বিছানা থেকে ওঠা, বাথরুমে যাওয়া, হাত মুখ ধোওয়া বা গোসল করা, কাপড় পরা ইত্যাদি কাজ করাও খুব কঠিন হয়ে যায়
মৃদু ব্যথা বলতে আমরা যা বুঝি:
ব্যথা আসা যাওয়া করে
ব্যথাটা বিরক্তিকর তবে আপনার দৈনন্দিন কাজ যেমন অফিসে যাওয়া ইত্যাদিতে ব্যঘাত ঘটায় না।
মাঝারি ব্যথা বলতে আমরা যা বুঝি:
ব্যথা সারাক্ষণ আছে
কোন কাজে মনোযোগ দিতে কষ্ট হয়
ঘুমাতে কষ্ট হয়
ব্যথা সত্ত্বেও বিছানা থেকে ওঠা, হাত মুখ ধোওয়া বা গোসল করা, কাপড় পরা ইত্যাদি কাজ করা সম্ভব হয়
বমি ও ডায়রিয়া হওয়ার কারণ
ঠিক কী কারণে বমি বা ডায়রিয়া হচ্ছে তা হয়তো নাও জানা যেতে পারে, তবে বমি বা ডায়রিয়ার মূল কারণগুলোর চিকিৎসা আসলে একই রকম।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হল:
পাকস্থলীতে জীবাণুর আক্রমণ বা গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস (gastroenteritis)
নরোভাইরাস (পাশ্চাত্য দেশগুলোতে একে vomiting bug ও বলে)
খাদ্যে বিষক্রিয়া (food poisoning)
ডায়রিয়ার অন্যান্য কিছু কারণ হল:
বিভিন্ন ওষুধ – যে কোন ওষুধের সাথে দেওয়া নির্দেশিকা পড়ে দেখবেন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কী কী
নির্দিষ্ট কোন খাবারে এলার্জি বা বিশেষ কোন খাবার সহ্য না হওয়া
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস (Irritable Bowel Syndrome/IBS)
ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ বা আইবিডি (Inflammatory Bowel Disease/IBD)
সিলিয়াক ডিজিজ (coeliac disease)
ডাইভার্টিকুলার ডিজিজ (diverticular disease)
নিচের কারণগুলোতে বমি হতে পারে:
গর্ভাবস্থা
মাইগ্রেনের ব্যথা
কানের ভেতরের ইনফেকশন বা ল্যাবিরিন্থাইটিস (labyrinthitis)
বিভিন্ন ওষুধ – যে কোন ওষুধের সাথে দেওয়া কাগজে লেখা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ে নিবেন
রিফ্লাক্স (reflux) – বাচ্চার মুখে খাবার উঠে আসে (থুতুর মত বের করে দেওয়া)
অন্যান্য ইনফেকশন, যেমন প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন (urinary tract infection)