মালদ্বীপে পেশাগত কৃষিশিক্ষার সূচনাকারী বাংলাদেশি

গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে মালদ্বীপ যাওয়ার সুযোগ হলো। মালদ্বীপের মিয়াঞ্জ এডুকেশনের সিইও মোহাম্মদ হালিম আমাকে আমন্ত্রণ জানান তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অষ্টম সমাবর্তনে উপস্থিত থাকার জন্য। তারা বাংলাদেশের কৃষিবিষয়ক টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখে কৃষি বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমাকে তারা তাদের স্কুল অব অ্যাগ্রিকালচার দেখাতে চান। পাশাপাশি আমার উপস্থিতিতে মালদ্বীপের আড্ডু নামক এক দ্বীপে মিয়াঞ্জ স্কুল অব অ্যাগ্রিকালচার ও আড্ডু সিটি কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে মিয়াঞ্জ অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ সেন্টার উদ্বোধন করতে চান। মালদ্বীপের মতো সমুদ্রে ভাসা দ্বীপরাষ্ট্রে কৃষির কথা শুনে আগ্রহী হলাম।

 

ভিডিও নিউজ দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন এএনবি২৪  ইউটিউব চ্যানেল।

নীল জলরাশি আর সাদা বালির দ্বীপভূমি মালদ্বীপ। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। ছোট-বড় ১ হাজার ২০০ দ্বীপ নিয়ে গড়া মালদ্বীপের মূল আকর্ষণ এর সরল, শান্ত ও মনোরম পরিবেশ। যতদূর চোখ যায় অপার সমুদ্র, দিগন্তজোড়া নীল মোহমুগ্ধ করে রাখে, যার টানে নানান দেশ থেকে ছুটে আসেন পর্যটক। পর্যটন খাত আর সমুদ্রের মাছ দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত। তবে পরিবর্তিত জলবায়ু এবং বৈশ্বিক সংকটকে বিবেচনায় রেখে সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর কৃষি খাত নিয়ে নতুন করে ভাবছে মালদ্বীপ। একদিকে নিজের খাদ্য নিজেই উৎপাদনের তাগিদ, অন্যদিকে প্রযুক্তির বিকাশে কৃষি এখন পৃথিবীর সব দেশেই সম্ভব। তাই মালদ্বীপও সূচনা করতে চাচ্ছে বাণিজ্যিক কৃষি অনুশীলনের। বাংলাদেশে নভেম্বরের শেষ দিকে মোটামুটি শীত চলে আসে, কিন্তু মালদ্বীপে শীতের কোনো দেখাই নেই। মূলত মালদ্বীপে শীতকাল বলে কোনো ঋতুই নেই। আমরা যখন পৌঁছালাম তখন তাপমাত্রা ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচন্ড রোদ।

মালদ্বীপ সহ সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে এএনবি২৪ ডট নেট ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ।

মালদ্বীপের মালের ভেলানা বিমানবন্দরে আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন মিয়াঞ্জ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ মোত্তাকী। গাড়িতে করে হোটেলে যেতে যেতে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান। শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে ১৯৯৩ সালে মালদ্বীপে আসেন। এখন মালদ্বীপে তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। বেশ কয়েকবার মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তিনিই মূলত মালদ্বীপে পেশাগত কৃষিশিক্ষার সূচনাকারী।
বাণিজ্যিক কৃষির পূর্বশর্তই হচ্ছে কৃষিতে দক্ষ জনগোষ্ঠী। পরিবর্তিত কৃষিচর্চায় প্রয়োজন কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা-বোঝা এবং আধুনিক কৃষি সম্পর্কে হাতে-কলমে শিক্ষা। এ গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছেন আহমেদ মোত্তাকী।

 

আমার জন্য গর্বের বিষয় হচ্ছে- আহমেদ মোত্তাকীর কৃষি ভাবনার মূলে রয়েছে বাংলাদেশের টেলিভিশনে প্রচারিত কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান। তারই প্রতিফলন ঘটে মালেতে অনুষ্ঠিত আহমেদ মোত্তাকীর হাতে গড়ে ওঠা মিয়াঞ্জ কলেজের অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমাকে সম্মানিত করার মাধ্যমে।

মিয়াঞ্জ স্কুল অব অ্যাগ্রিকালচার অবস্থিত মালদ্বীপের আড্ডু সিটিতে। মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে প্রায় ৫৩৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ভারতীয় মহাসাগরের বুকে হৃদয় আকৃতির দ্বীপ আড্ডু। মালে থেকে আকাশপথে আড্ডু যেতে আমাদের সময় লেগে যায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।

গ্যান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নেমে আমরা চলে যাই মিয়াঞ্জ স্কুল অব অ্যাগ্রিকালচার দেখতে। স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীরা আমাদের অভ্যর্থনা জানাল তাদের ঐতিহ্যবাহী ডাব হাতে। আঞ্চলিকভাবে মালদ্বীপের মানুষ একে বলে কুরুম্বা। শিশুর হাত থেকে কুরুম্বা নিতে নিতে কথা হলো তাদের সঙ্গে। ভারি মিষ্টি শিশুরা ইংরেজিতে কথা বলল। সকালের শিফটে স্কুল হিসেবে ক্লাস চলে শিশুদের আর দুপুর থেকে ক্লাস চলে কলেজের।

আড্ডুর ওই কলেজ ক্যাম্পাসেই বপন করা হয়েছে একটি স্বপ্নের বীজ। সাদা বালির দ্বীপ এক দিন হবে বর্ণিল ফসলের খাত। স্বপ্ন তো সেটাই যা বাস্তবায়নের জন্য মানুষ পথে নেমেছে। আহমেদ মোত্তাকীও সেই স্বপ্নবান মানুষ যিনি তার স্বপ্নের দিকে হেঁটে চলেছেন। কলেজ ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বললেন, মালদ্বীপে ১৭ দ্বীপে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস রয়েছে। এ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানেও শাখা রয়েছে।

মোত্তাকী সাহেব কথা ও কাজে সুচারু। খুব গোছানো। কথা বলে বোঝা গেল খুব ভেবেচিন্তেই তিনি পথ হাঁটছেন। নিজের স্বপ্নটিকে তিনি বাস্তবতার নিরিখেই তৈরি করেন। এখানে কৃষিবিষয়ক পাঠ কার্যক্রম শুরুর আগে তিনি বাংলাদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় পাঠ্যক্রম তৈরি করে এনেছেন। শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি কৃষিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থাও তিনি করেছেন।

কলেজ ক্যাম্পাসের এক পাশে কৃষির আয়োজন। এখানকার শিক্ষার্থীদের হাতেই বাংলাদেশের ছাদকৃষির মতো করে এখানকার এ ক্যাম্পাসটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে নানান ফল-ফসলে। টমেটো, শিম, লাউ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম ফলের চাষ। এ উদ্যোগটিতে গবেষক হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশের আরেক কৃষিবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ। কথা বলি তার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে মাটিতে লবণাক্ততা নেই। কিন্তু বালি ও পাথুরে মাাটি বলে কৃষি উপযোগী নয়। তাই পিট পদ্ধতি ও টবে চাষের মাধ্যমে ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের ছাদকৃষির মতোই। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে কৃষিরও পরীক্ষামূলক প্লট চোখে পড়ল।

এখানে কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গেও কথা হলো। তাদের কাছে জানতে চাইলাম, আপনাদের দেশে তো ঐতিহ্যগতভাবে কৃষির চর্চা ছিল না। কৃষিতে আগ্রহী হলেন কীভাবে? একজন বললেন, মালদ্বীপে কৃষির প্রয়োজনীয়তা আমরা উপলব্ধি করছি। আমরা জেনেছি পুরো পৃথিবীতেই কৃষি এখন বেশ সম্ভাবনাময় একটি খাত। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইতোমধ্যে আমি সাইড বিজনেস হিসেবে কৃষিকে বেছে নিতে পেরেছি। আমি অর্কিড নিয়ে কাজ করছি। বেশ চাহিদা ওগুলোর।

আরেকজন ফসল ফলাতে পেরে খুব উচ্ছ্বসিত। তিনি বললেন, কৃষি একটা দারুণ ব্যাপার। বিশেষ করে ফসল ফলানোর মতো আনন্দের কিছু নেই। আমি আমার বাড়ির আঙিনায় সফলভাবে টমেটো ফলাতে সক্ষম হয়েছি। নিজের ফলানো সতেজ ফসলের স্বাদই অন্যরকম।

পাশের জন বললেন, আমি টমেটো ও আলু চাষ করছি। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে শিখেছি কীভাবে চাষ করতে হয়। এর আগে আমি কখনো ফসল ফলাতে দেখিনি। আমার পূর্বপুরুষেরাও কখনো দেখেছেন বলে মনে হয় না।

আমি বললাম, আপনারা তো তাহলে এখানকার কৃষি ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন! বেশ! তাদের একজন বললেন, হ্যাঁ। ঠিক বলেছেন আপনি। কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মালদ্বীপের মতো জায়গাতে আমরা ফসল ফলাতে পারছি। এটা চমৎকার একটি বিষয়। কৃষি নিয়ে আমাদের বড় স্বপ্ন দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এরপর মিয়াঞ্জ স্কুল অব অ্যাগ্রিকালচার ও আড্ডু সিটি কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে মিয়াঞ্জ অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ সেন্টার উদ্বোধনে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়। সেখানে কথা হয় আড্ডুর সিটি মেয়র আলী নিযারের সঙ্গে। মালদ্বীপের কৃষি নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনার বিষয়টি জানতে চাই। তিনি বলেন, করোনা মহামারির সময় আমরা আসলে কৃষির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি। এখন তো নিজেদের খাদ্য নিজেদেরই উৎপাদনের সুযোগ এসেছে। প্রযুক্তি সহজ করে দিচ্ছে সব। কৃষি বিষয়ে মিয়াঞ্জের প্রচেষ্টা আমাদের চোখ খুলে দেয়। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই দেখে মনে হলো তাদের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে আমাদেরও অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। আর মালদ্বীপ সরকারও কৃষিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তাই আড্ডু সিটি করপোরেশন মিয়াঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ সেন্টারটা চালু করছে। আমরা ধীরে ধীরে আড্ডুকে কৃষির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা- এ দুটি বিষয়কেই মালদ্বীপ প্রাধান্য দিয়ে আগামীর কথা ভাবছে। তারা চাচ্ছে কৃষিতে নতুন প্রজন্ম আগ্রহী হয়ে উঠুক। আনুষ্ঠানিকতা শেষে আড্ডুর মাটিতে রোপণ করা হয় আমাদের নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের আম গাছ।

মালদ্বীপের মতো সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা অনুর্বর দ্বীপ দেশও আজ অনুধাবন করতে পারছে কৃষির গুরুত্ব। ফলে পরিবর্তিত জলবায়ু ও সংকটপূর্ণ আগামীর চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তার দিকেই মনোযোগী মালদ্বীপ। আশার কথা- দেশটির এ কৃষিভিত্তিক উদ্যোগগুলোর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন কৃষিপ্রেমী বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের কৃষিচর্চা-গবেষণা এবং শিক্ষক-গবেষকরা রাখতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পাশাপাশি মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের মাঝে কৃষিজ্ঞান অনুশীলন ও প্রযুক্তির বিনিময় হতে পারে বন্ধুত্ব ও বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম। আমার বিশ্বাস, কৃষি বিষয়ে পারস্পরিক সহাবস্থান দুই দেশের টেকসই উন্নয়নের ধারাকে দেবে নতুন মাত্রা।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

shykhs@gmail.com

প্রকাশকঃএম এইচ, কে , উপদেষ্টা সম্পাদক,জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃনির্বাহী সম্পাদকঃ বার্তা সম্পাদকঃ সাইদুর রহমান মিন্টু এএনবি২৪ ডট নেট নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে । তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি anb24.net is one of the most popular Bangla News publishers. It is the fastest-growing Bangla news media that providesective news within the accurate and obj shortest poassible time.anb24.net intends to cover its reach throughout every district of the country, also global news of every segment such as politics, economics, sports, entertainment, education, information and technology, features, lifestyle, and columns anbnewsbd@gmail.com /mahamudulbd7@gmail.com mahamudul@anb24.net