দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপপুঞ্জের দেশ মালদ্বীপ ছোট হলেও ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রনির্ভর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দেশটি এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত দুই শক্তিশালী দেশ চীন ও ভারতের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মালদ্বীপ স্বাধীনতার পর থেকে অর্থনীতি ও নিরাপত্তাগত দিক দিয়ে ভারতনির্ভর। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বোঝা যাচ্ছে বেইজিংয়ের হিসাবনিকাশের বাইরে নয় মালদ্বীপ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, দেশটিতে প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট চীন ও ভারতের ভবিষ্যৎ ছক কষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আগামীকাল শনিবার পর্যটকদের পছন্দের দেশটিতে হতে যাচ্ছে এ নির্বাচন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ লাখ ২১ হাজার জনসংখ্যার দেশটিতে এশিয়ার দুই প্রভাবশালী রাষ্ট্র চীন ও ভারত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। উভয় দেশ নিজের সুনাম ও প্রভাব বজায় রাখতে চায়। ভারত দেশটির নিরাপত্তা খাতে আগে থেকেই জড়িয়ে আছে। এ ছাড়া কভিডকালে ভ্যাকসিন কূটনীতিতেও মালদ্বীপে বড় প্রভাব রেখেছে ভারত। দেশটির ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজার। তাদের ভোটের দিকে তাকিয়ে দুই বড় শক্তি। রয়টার্স বলছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলিহ বড় প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী। তিনি ‘ভারত প্রথম নীতি’ গ্রহণ করেছেন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি সামান্য এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রোগ্রেসিভ পার্টি ও পিপল’স ন্যাশনাল কংগ্রেসের জোটের প্রার্থী মোহাম্মদ মুইজ্জুর সঙ্গে চীনের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তিনি ‘ভারত বিদায়’ কর্মসূচি নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। মুইজ্জু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটি থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী উপস্থিতির অবসান ঘটাবেন। মালদ্বীপে ভারতের কয়েকটি নজরদারি উড়োজাহাজ ও প্রায় শ-খানেক সেনা রয়েছে।
যদিও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবাধিকার আইনজীবী আহমেদ শহিদ রয়টার্সকে বলেন, ‘দেশে ভোটারদের কাছে ভারত-চীন ইস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার মনে হচ্ছে না।’ তার মতে, এবারের বড় চ্যালেঞ্জ হলো ঋণ ব্যবস্থাপনা। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, মালদ্বীপের ঋণের পরিমাণ দেশটির জিডিপির ১১৩ শতাংশ।
গত মাসে বানি সেন্টার থিংক ট্যাংকের প্রকাশিত একটি জরিপের ফল অনুসারে, মালদ্বীপবাসীর ২১ শতাংশ সোলিহকে সমর্থন করছে। মুইজ্জুকে সমর্থন করছে ১৪ শতাংশ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যৌথ বিরোধী প্রার্থী হিসেবে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন সোলিহ। ২০২১ সালে রাজধানী মালের মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়ে সবাইকে অবাক করে দেন মুইজ্জু। ওই সময় রাজধানীকে সোলিহের মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে মনে করা হতো।
সংকটের সময় প্রথম সাড়া দাতা হিসেবে ভারতকে তুলে ধরছেন সোলিহ। মুইজ্জুর দল বলছে, ভারতের অত্যধিক প্রভাব দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। তিনি অভিযোগ করেছেন, দেশটিতে স্থায়ী সামরিক উপস্থিতির পরিকল্পনা করছে দিল্লি।