বুড়িচংয়ে  বৃদ্ধাকে  গলা কেটে হত্যা; আটক ৩

বুড়িচং, কুমিল্লা।।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার চড়ানল গ্রামে আয়েশা আক্তার নামের এক বৃদ্ধাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

 এ ঘটনায় তিনজন কে আটক করেছে বুড়িচং থানা পুলিশ। 

আটককৃতরা  হলেন, আবুল বাশারের ছেলে  মো. তন্ময় (১৯) ,জাকির হোসেনের ছেলে মো. হানজালা (১৯) ও জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মেহেদী হাসান(২৫)। 

গত ১৩ মে, সোমবার রাতে কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চড়ানলে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

নিহত আয়েশা আক্তার (৫৬) চড়ানল গ্রামের মো. শামসুদ্দোহা মুহুরীর স্ত্রী এবং  বুড়িচং উপজেলা বাকশিমূল ইউনিয়নের আজ্ঞাপুর গ্রামের আব্দুর রশীদের মেয়ে। নিহতের ২ ছেলে, ৩ মেয়ে।

 ১৪ মে, মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,  সোমবার রাত সাড়ে ৭টায় নিহত বৃদ্ধার নিজবাড়ীর  তন্ময় নামক ছেলে আয়েশা আক্তারকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ডেকে নেওয়ার ১ ঘন্টা পরেও সে ফিরে না আসায় ছেলের বউ নাহিদা আক্তার  তার শ্বাশুড়ির মোবাইল নাম্বারে বার বার কল দেয়। কল না ধরায় সে তার এক চাচা শ্বশুরকে কল করে বলে। তারা এসে খুঁজে  তার শ্বাশুড়ির গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে। 

নিহতের ছেলের বউ  নাহিদা আক্তার জানায়, পাশের বাড়ির তন্ময় আমার শ্বাশুড়িকে রাতের ৭ টায় তাদের ঘর  থেকে ডেকে নিয়ে যায়। আমি আমার রুমে ছিলাম।  ঘন্টাখানেক পরেও আমার শ্বাশুড়ি ফিরে না আসায় আমি জানালা খুলে বাহিরে তাকাই। বাহিরে লাইট জালানো ছিলো। উঠানের দক্ষিণ মাথায় মানুষের মাথার মতো কি যেন দেখা যায়। আমি ভাবছি কেউ নেশা করে মনে  হয় পড়ে আছে। একটু পরে তন্ময় আসে।  সে এসে জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে৷ আমাকে কিছু না বলে পেছনের দরজা দিয়ে আমাকে ডাক দেয়।  আমাকে বার বার দরজা খুলতে বলে।  আমি দরজা না খুলে তাকে বলি যা বলার জানালা দিয়ে বলার জন্য এবং  আম্মা(শাশুড়ি)কে যেন তাড়াতাড়ি ঘরে পাঠায়। নয়টা থেকে সাড়ে নয়টায় যখন আমার শ্বাশুড়ি আসে না তখন পাশের ঘরের এক চাচাকে আমি কল করি। সে মেহেদীকে তন্ময়ের ঘরে পাঠায়। তারা সেখানে তাকে না পেয়ে খোঁজাখুজি শুরু করে। আমি যেখানে মাথার মতো দেখে ছিলাম সেখানে গিয়ে দেখে আমার শাশুড়ির গলা কাটা লাশ। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। এসময় পুলিশ ৩ জনকে ধরে নিয়ে যায়।

জানা যায়,কিছুদিন পূর্বে নিহত নারীর বাবার বাড়ির এলাকা থেকে তন্ময় ও তাঁর সহযোগীরা এক কিশোরীকে তুলে এনে বাড়িতে আটকিয়ে রাখলে আয়েশা আক্তার এ ঘটনা নিয়ে তাদের বকাঝকা এবং প্রতিবাদ করেছিলেন।

বুড়িচং থানার পুলিশ এস আই নুুরুল ইসলাম জানান,নিহত আয়েশা আক্তারের বাড়ির আবুল বাশারের স্ত্রী সম্পর্কে ঝাঁ কানিজ ফাতিমা তার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম তম্ময়কে দিয়ে মাগরিবের নামাজের একঘন্টা পর ডেকে তার বাড়ীতে নিয়ে যান। এর পর থেকে তিনি আয়শা আক্তার নিখোঁজ হয়। পুত্র বধূ শারমিন আক্তার কোথাও তার শাশুড়ীকে না পেয়ে তার সৌদি প্রবাসী স্বামী নুরুল আমিন কে জানালে তিনি এলাকার প্রতিবেশী মেহেদী কে ফোন করে বিষয়টি দেখার জন্য বলে। এ সময় সে গিয়ে দেখে ওই বাড়ির পূর্ব ভিটির ঘরের সামনে রক্তাক্ত ওই বৃদ্ধা নারীর গলা কাটা লাশ মাটিতে পড়ে আছে । এসময় তাদের আত্মচিৎকারে এলাকার আশে-পাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং আব্দুল অদুদ মেম্বার জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নাম্বারে কল করে পুলিশকে অবগত করে। রাতে ঘটনার স্থলে বুড়িচং থানায় ওসি আবুল হাসানাত খন্দকার ও সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের লিডার তন্ময় এর ঘর থেকে একটি রক্তমাখা ছুড়ি উদ্ধার করে। পরে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ প্রেরণ করে।

বুড়িচং থানার ওসি আবুল হাসানাত খন্দকার জানান,  ঘটনাস্থল থেকে জিজ্ঞাসা বাদের জন্য তৌহিদুল ইসলাম তম্ময়, মেহেদী ও হানজালাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। তদন্ত চলমান রয়েছে।