বিএনপিসহ ৩২টি সমমনা বিরোধী দল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শোডাউনের মিছিল করেছে।
প্রথম যৌথ কর্মসূচির মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটিকে বর্তমান সরকারকে পতনের একটি সম্মিলিত আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনসহ তাদের ১০ দফা দাবিতে চাপ দেয়ার জন্য তারা তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে ১১ জানুয়ারি সারাদেশে পৃথকভাবে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা একযোগে আন্দোলনের অংশ হিসেবে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে নগরীর মালিবাগ, পল্টন ও মতিঝিল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে জামায়াত নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়, এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়। পুলিশ ইসলামী দলটির কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটকও করেছে।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নয়াপল্টনের সামনে থেকে বিশাল মিছিল বের করে বিএনপি। এটি বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড় হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মগবাজারে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আগামী ১১ জানুয়ারি সারাদেশে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
৯ ডিসেম্বর মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীরকে গ্রেপ্তারের পর থেকে দলের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।রাজধানীর নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তাদের দল কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) যেসব দল ও জোট গণমিছিল কর্মসূচির আয়োজন করেছে তারাও গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই কর্মসূচি পালন করে সরকারকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখানো হবে।’
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন যে ২০০৭ সালে সেই দিনে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে ১১ জানুয়ারির জন্য এই কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছিল- দেশে যা ১/১১ নামে পরিচিত।
মোশাররফ বলেন, জনগণ এই দলের সঙ্গে না থাকায় রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জামানতের টাকা হারিয়েছেন। ‘এই ফলাফলের মাধ্যমে দেশের জনগণ সরকারকে সংকেত দিয়েছে। দেশের কোথাও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দল শোচনীয় পরাজয়ের মুখে পড়বে, এটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দিন ঘনিয়ে এসেছে, আগামীতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে।
বিএনপি নেতা দাবি করেন যে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে, তাই তারা একই শিরায় চলতে চায়।
সরকার স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়বে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করবে। এ জন্য পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মোশাররফ বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ প্রায় ২৪ হাজার বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীকে কারাগারে রাখা হয়েছে। কিন্তু সরকার এখনও বিএনপি নেতাকর্মীদের দমন করতে পারেনি। ‘মানুষ রাস্তায় নেমেছে এবং সরকার বিভিন্ন পয়েন্ট ও গলিতে পাহারা দিয়ে তাদের দমন করতে পারেনি।’
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপিসহ প্রায় ৩৩টি সমমনা রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময়ে রাজধানীতে গণমিছিল কর্মসূচির আয়োজন করে।
আজকের কর্মসূচিটি মূলত ২৪ ডিসেম্বরের জন্য নির্ধারিত ছিল। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের কর্মসূচি ইতোমধ্যেই সেই তারিখের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে বুঝতে পেরে বিএনপি গণমিছিলের তারিখ পুনর্নির্ধারণে সম্মত হয়। এরপর পিছিয়ে দেয়া হয় আজকের এই কর্মসূচি। সিটি নির্বাচনের কারণে রংপুরেও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে গণতন্ত্র মঞ্চ গণমিছিল বের করে।
শোভাযাত্রাটি পল্টন মোড় ও বিজয়নগর সড়কের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে এসে শেষ হয়।
এই রাজনৈতিক জোটটির নেতারা ১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
দুপুর আড়াইটার দিকে বিজয়নগরের পানির ট্যাংকি থেকে ১২ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করে এবং ১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন। জোটের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা বলেন, চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ১১টি বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট তাদের মিছিল বের করে এবং ১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দেয়।
বিকালে এফডিসি সংলগ্ন তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পৃথকভাবে গণমিছিল বের করেন এলডিপির নেতারা।
বিরোধী দলের গণমিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার অতীতের অভিযোগে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।