চৌদ্দগ্রামে সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয়ে ব্যবসায়ীর প্রায় ১৩ লাখ টাকা নিয়ে উধাও

মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সোনালী ব্যাংক এর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক কোটি টাকা ঋণ উত্তোলন করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক মুরগি ফার্ম ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ১৩ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে মো: মহিম উদ্দিন (৪৪) নামে এক প্রতারক। মহিম উদ্দিন উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের মফিজুর রহমান সরকারের ছেলে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী মো: মনসুর হায়দার ভূঁইয়া প্রকাশ স্বপন অভিযুক্ত মহিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি প্রতারণার মামলা (মামলা নং-৩৭৮/২৪, তাং-০৮.০৪.২০২৪ইং) দায়ের করেন।

আদালতে দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের চিলপাড়া এলাকার মো: ইউসুফ ভূঁইয়ার ছেলে মো: মনসুর হায়দার ভূঁইয়া স্বপন নিজ বাড়ীর পাশে ‘মনসুর হায়দার ভূঁইয়া স্বপন পোল্ট্রি ফার্ম’ নামীয় তিনটি শেড বিশিষ্ট একটি মুরগি ফার্ম পরিচালনা করে সততার সাথে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ গ্রহণের জন্য খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। এমতাবস্তায় চিলপাড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাসকারী মহিম উদ্দিনের সাথে স্বপন ভূঁইয়ার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে মহিম উদ্দিন নিজেকে সোনালী ব্যাংক, চৌদ্দগ্রাম শাখার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে স্বপন ভূ্ইঁয়াকে ৬০ লাখ টাকা ঋণ পাইয়ে দেওয়ার আশ^াস প্রদান করেন। এ সময় মহিম উদ্দিন তাকে বলেন, খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ঋণ প্রসেসিং হয়ে যাবে, কিন্তু প্রসেসিং বাবদ প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হবে এবং খালি স্ট্যাম্পে ঋণ প্রস্তাবকারীর স্বাক্ষর সহ স্বাক্ষরিত দু’টি খালি চেকের পাতা লাগবে বলেও জানান।। কয়েকধাপে এ টাকাগুলো আগেই খরচ করতে হবে বলেও জানান তিনি। ওই ব্যবসায়ী তার কথার প্রলোভনে পড়ে গত ২১ ফেব্রæয়ারির পর থেকে বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৩০০ টাকা প্রদান করেন। এছাড়াও নগদ দুই ধাপে ৫ লাখ টাকা করে মোট দশ লাখ টাকা সহ সর্বমোট ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৩০০ টাকা প্রদান করেন। এরই মধ্যে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ঋণ পাস হয়ে গেছে বলে ব্যবসায়ী স্বপন ভূঁইয়াকে ইমুতে অগোছালো লেখা সমৃদ্ধ একটি চেক প্রেরণ করে প্রতারক মহিম উদ্দিন সর্বশেষ গত ০১ এপ্রিল ওই ব্যবসায়ীর নিকট থেকে কয়েকজন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে নগদ আরো ৫ লাখ টাকা নিয়ে যান। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি (০১৬০২-৭৮৬৩০৫) বন্ধ করা সহ স্বপন ভূ্ইঁয়ার সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেন মহিম উদ্দিন। পরে স্বপন ভূইয়া ব্যাংকে গিয়ে অনুসন্ধান করে প্রতারক কর্তৃক প্রদত্ত চেকটি ভুয়া বলে জানতে পারেন। এ ঘটনার পর থেকেই মহিম উদ্দিন, তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে বহুবার যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনের পরামর্শে ভুক্তভোগি ওই ব্যবসায়ী আদালতে মামলা দায়ের করেন। টাকা খুইয়ে বিচারের আশায় প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে ঘুরছেন ভুক্তভোগি ওই ব্যবসায়ী। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার (২৬ মে) দুপুরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ও র‌্যাব-১১, সিপিসি-০২ এর কার্যালয়ে প্রতারক মহিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী মনসুর হায়দার ভূঁইয়া স্বপন বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারক মহিম উদ্দিন আমার সব লুট করে নিয়ে গেছে। আজ আমি পথের ভিখারী। অনেকের কাছ থেকে টাকা ধার করে এনে তাকে দিয়েছিলাম। আজ ঘুম থেকে উঠেই পাওনাদারদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হতে হচ্ছে। অতি সরলতায় আজ মহাবিপদে পড়ে গেছি। আমি প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।’

অভিযুক্ত মহিম উদ্দিনকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ‘আমি দুবাই থাকি। স্বপন ভূঁইয়ার কাছে আমিই টাকা পাই। আমার কাছে তার দেওয়া স্ট্যাম্প ও চেক রয়েছে। এখন সে আমার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে আদালতে মামলা করেছে। চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই সুজন কুমার চক্রবর্তী বিষয়টি তদন্ত করে গেছেন।’

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক, চৌদ্দগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক মো: জহুর আহমেদ জানান, ‘মহিম উদ্দিন নামে আমাদের শাখায় কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। এ শাখা থেকে বিগত পাঁচ বছরেও ১ কোটি টাকার কোনো ঋণ প্রস্তাব করা হয়নি। এটি প্রতারকের কাজ হতে পারে।’

আদালতে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক সুজন কুমার চক্রবর্তী জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। শীঘ্রই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’