Free YouTube Subscribers
anb24.net
সত্যের সন্ধানে আমরা বিশ্ব জুড়ে

ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে ‘যুদ্ধ’ চাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা-anb24.net

0 112

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাংলাদেশকে ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে যুদ্ধে টেনে নিয়ে নিজ দেশে ক্রমক্ষয়িষুষ্ণ ক্ষমতাকে আবারও পোক্ত করতে চাচ্ছে বলে কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক ও সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন।

 

বাংলাদেশে জাতিসংঘ কার্যালয়, নেপিদোয় বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করার পর থেকে দেশটির সামরিক জান্তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। এরই মধ্যে চরম অর্থনৈতিক সংকটে অভ্যন্তরীণভাবেও বেশ বেকায়দায় পড়েছে সেনা সরকার। আর এ কারণে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে একটি যুদ্ধে জড়াতে চাচ্ছে তারা। নানা সমীকরণে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেই সবচেয়ে উপযুক্ত যুদ্ধক্ষেত্র বলে মনে করছে দেশটির ফৌজি সরকার।

 

বিশ্নেষকরা বলছেন, করোনার সময়ে মিয়ানমারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়েছে অং সান সু চির সরকারকে। এর পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার জেরে দেশটিতে ডলারের মূল্য বেড়ে যায়। ফলে আরেক দফা নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে দেশটিতে পণ্যমূল্য হয় আকাশচুম্বী। এতে ফুঁসে উঠেছে দেশটির সাধারণ মানুষ। এ পরিস্থিতিতে তাদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে যে কোনো উপায়ে অভ্যন্তরীণ বড় সংঘাত বা অন্য দেশের সঙ্গে একটি যুদ্ধ চাচ্ছে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা। এরই মধ্যে দেশটিতে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে, যাতে শত শত সেনা নিহত হয়েছে।

 

জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা  বলেন, মিয়ানমারের সীমান্ত প্রতিবেশী রয়েছে পাঁচটি দেশ। এগুলো হলো- চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, লাওস ও বাংলাদেশ। চীন জান্তা সরকারের অন্যতম বন্ধু; তাদের সঙ্গে কোনোভাবেই বিবাদে জড়াবে না দেশটি। মিয়ানমারের মতোই লাওস ও থাইল্যান্ড বৌদ্ধপ্রধান। ফলে তাদের সঙ্গেও কোনো বিরোধ চায় না। বৃহৎ শক্তি ভারতের বিরুদ্ধেও কোনো শক্ত মনোভাব নেই দেশটির বেশিরভাগ জনগণের। ফলে ভারতের সঙ্গেও যুদ্ধে জড়িয়ে লাভ নেই মিয়ানমারের। বাকি থাকে শুধু বাংলাদেশ।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মধ্যে মুসলিমবিরোধী কঠোর মনোভাব রয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি। বাংলাদেশিরা তাদের দেশে বহিরাগত। ফলে সেখানে বাংলাদেশ ও মুসলিমবিরোধী কার্ড খেলতে চাচ্ছে জান্তা সরকার। এখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে সক্ষম হলে জান্তা সরকার সাধারণ মানুষকে বোঝাবে- এ মুহূর্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় থাকা খুবই প্রয়োজন। আর এ কারণেই হয়তো বাংলাদেশকে ক্রমাগত উস্কানি দিচ্ছে মিয়ানমার।

 

বিশ্নেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর দেশটির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের দীর্ঘদিন অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল। এমনকি রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে তারা সহযোগী ছিল সেনাদের। তবে এ মুহূর্তে সমর্থন একেবারেই তলানিতে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বৌদ্ধদেরও অসন্তোষ বেড়েছে। কারণ, জান্তা সরকার দেশটির জনগণকে স্বাভাবিক জীবন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কার্যত ব্যর্থ রাষ্ট্রের পথে মিয়ানমার।

 

করোনা মহামারি, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি মিয়ানমারকে বেশ ভালোভাবেই সংকটে ফেলেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটিতে মূল্যস্ম্ফীতি ও বেকারত্ব ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দারিদ্র্য ৪২ শতাংশের ওপর ঠেকেছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে মাদক উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, জান্তা সরকার মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর খরচ মেটাতে চাচ্ছে।

 

বাংলাদেশের সঙ্গে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান সমকালকে বলেন, এতে মিয়ানমার সরকারের তিনটি লাভ রয়েছে। একটি হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি থেকে নজর সরিয়ে যুদ্ধের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করা। দ্বিতীয়টি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এটাকে মিয়ানমার বোঝা মনে করে। সংঘাত হলে প্রত্যাবাসন আটকে যাবে। তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, যুদ্ধ লাগলে আন্তর্জাতিক আদালত থেকে শুরু করে অন্যান্য স্থানে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যতটুকু এগিয়ে ছিল, তা সব আটকে যাবে। আর বাংলাদেশের অর্থনীতিও এখন দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই। তা ছাড়া বাংলাদেশের সামনে জাতীয় নির্বাচন। আর এ কারণে এ সময়কেই বেছে নিয়েছে জান্তা।

 

ঢাকায় কর্মরত পশ্চিমা একটি দেশের দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত মিয়ানমারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। মিয়ানমারে থাকা মিশন থেকে আমাদের হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হচ্ছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, বাংলাদেশের ভেতর থেকে বিদ্রোহীরা মিয়ানমারে গিয়ে সহিংসতা করে আবার বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছে।’

 

মিয়ানমারের এ ধরনের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের অভিযোগ করে আসছে। তবে বাংলাদেশের অবস্থান পরিস্কার- অন্য কোনো দেশের সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের জন্য বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এ বার্তাই তাদের একাধিকবার দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও তাদের অভিযোগের পর সীমান্তে বাংলাদেশের নজরদারি ও পাহারাও জোরদার করা হয়েছে।

 

বাংলাদেশে মর্টার শেল ও গোলা পড়ার জন্য গত ২০ দিনে তিনবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সতর্ক ও কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। তা সত্ত্বেও ক্রমাগত আকাশসীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে দেশটি। একাধিকবার সতর্ক করার পরও বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না দেশটি। বাংলাদেশ শুরুতে এটিকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে দেখলেও এখন সতর্ক দৃষ্টিতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

 

শনিবার রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা হুমকির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

 

মিয়ানমারের জান্তা সরকার অভ্যন্তরীণভাবেও প্রতিরোধের মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে জান্তা সরকার সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আস্থা আর বর্তমানে জান্তার ওপর নেই।

 

তিনি বলেন, মিয়ানমারের উস্কানি বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবেই মোকাবিলার চেষ্টা করছে। কারণ দেশটিতে একটি গৃহযুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দেশটির অভ্যন্তরীণ সংকটে বাংলাদেশের জড়িয়ে পড়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সারাবিশ্বের নৈতিক সমর্থন পাচ্ছে ঢাকা। তাই তাদের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে দৃষ্টিটা অন্যদিকে চলে যাবে। আর মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অংশীদার হলে তা হবে বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।

 

তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত কূটনৈতিকভাবে যে কার্যক্রম বাংলাদেশ চালাচ্ছে, সেটিই অব্যাহত রাখা উচিত। সরকার দ্বিপক্ষীয়ভাবে এবং চীন ও ভারতের মতো বন্ধুরাষ্ট্রের সাহায্য নিতে পারে, যাতে এ অবস্থা আরও খারাপ না হয়। এগুলো কোনো কিছুই কাজ না করলে পরে হয়তো অন্য কোনো ব্যবস্থা চিন্তা করা যাবে। তবে তিনি বলেন, মিয়ানমার এ আচরণ বজায় রাখলে বাংলাদেশও জবাব দিতে প্রস্তুত বলে বার্তাও পৌঁছে দিতে হবে।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

Leave A Reply

Your email address will not be published.