পৃথিবীর অন্যতম সৌন্দর্য্যমন্ডিত দেশ ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। শান্ত ও মনোরম পরিবেশ, পুরাতন এই সমুদ্র সৈকত মালদ্বীপের প্রধান আকর্ষণ। যেখানে পানির রং নীল আর বালির রং সাদা। তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা মালদ্বীপের সবগুলো দ্বীপের চারদিকে ঘিরে আছে সাগরের অফুরন্ত জলরাশি।শ্রীলঙ্কা থেকে প্রায় ৪৫০ মাইল পশ্চম দক্ষিণে ১২০০টি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত হয় মালদ্বীপ।
সাদা বালুকাময় সৈকত, স্বচ্ছ সমুদ্র এবং রঙিন সামুদ্রিক জীবন দিয়ে শুরু মালদ্বীপ পর্যটন শিল্প আজ বিশ্বের এক নম্বর পর্যটন গন্তব্য।
মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পের শুরু হয় আজ থেকে ৫০ বছর আগে, তখন একজন ইতালীয় ভ্রমণকারী ভারত মহাসাগরের গুগলের চার্টে দেখেছিলেন একটি সাদা বালুকাময় সমুদ্র সৈকত।
সালটা ছিল (১৯৭১)একাত্তর। জর্জ করবিন ছিলেন একজন ট্রাভেল এজেন্ট যা ডাইভিং ট্রিপে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। একটি সম্পূর্ণ নতুন এবং ভিন্ন গন্তব্য প্রদানের জন্য তার প্রচেষ্টা শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিমে তার নজর কেড়েছিল। তিনি ভেবেছিলেন এটি একটি ভাল গন্তব্য হতে পারে।

কুরুম্বা রিসোর্টে জর্জ করবিন ডানে এবং আহমেদ নাসিম (ভাবে )। (ছবি/ভ্রমণ এবং জীবনধারা মালদ্বীপ)1972
কিন্তু সেই দেশ, গ্রাম সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। তখন কর্বিনের নিজের চেষ্টায় সে জানতে পারে যে শ্রীলঙ্কায় মালদ্বীপের একটি দূতাবাস রয়েছে। তিনি শ্রীলঙ্কার গিয়েছিল কলম্বোতে ।
তিনি কলম্বোতে মালদ্বীপের দূতাবাসে মালদ্বীপের বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহমেদ নাসিমের সাথে দেখা করেন। নাসিম ওই সময় দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। পরের দিন, জর্জ করবিন
ও আহমেদ নাসিম সমুদ্রপথে মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
তখন মালদ্বীপ এর কাছাকাছি আসার সাথে সাথে করবিন তার বাম দিকে একটি ছোট বিল্ডিং সহ হুবলির বিমানবন্দর দেখতে পান। ডানদিকে ছিল রাজধানী।”সে সময় করবিন বলেছিলেন এটি স্বর্গ।
নাসিম তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। নাসিমের সাথে অনেক আইল্যান্ডে ঘুরেছেন।
জর্জ করবিন এর সাথে বর্তমানে মালদ্বীপ এসোসিয়েশন অফ ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উমর মানিক ও ভাইস চেয়ারম্যান হোসেন আফিফের সঙ্গেও তার পরিচয় করিয়ে দেন।
“নাসিমকে জর্জ করবিন জিজ্ঞেস করেছিলেন কোন আইল্যান্ডে পর্যটকদের থাকার জন্য] সবচেয়ে ভালো হবে। তিনি বলেন কুরুম্বা ও ভিহামানফুশি, ভালো হবে কারণ এটি বিমানবন্দরের কাছাকাছি।
সেই সময়ে, চারজন একসাথে পর্যটন ব্যবসা শুরু করতে রাজি হন। সেই থেকে মালদ্বীপের পর্যটন শিল্প আজ বিশ্বের এক নাম্বার। দেশটির মাথাপিছু আয় হলো ৯ হাজার ১২৬ ডলার যাহা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপের মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি। আদিমকাল থেকেই সামুদ্রিক মাছ হচ্ছে দেশটির অর্থনীতির মূলভিত্তি। মালদ্বীপ টুনা ফিস এর জন্য বিখ্যাত। তবে বর্তমানে দেশটির বড় শিল্প হলো পর্যটন। বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে পর্যটন থেকে।
বর্তমানে দেশটির জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার গড়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি। ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই মালদ্বীপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৬৮ সালে ‘সালাতানাতে মালদ্বীপ’ থেকে ‘রিপাবলিক মালদ্বীপে’ পরিণত হয়।

মালদ্বীপ ভ্রমণ করা পর্যটকদের প্রথম দলের সাথে জর্জ করবিন। (ছবি/কুরুম্বা)১৯৭২
সেই ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো একদল পর্যটক জর্জ করবিন এর সাথে মালদ্বীপে ভ্রমণে আসেন। প্রায় বিশ জন ছিলো এই দলে যার বেশিরভাগই ছিল ইতালীয় সাংবাদিক।
সেই বছরের ৩ অক্টোবর, মালদ্বীপের প্রথম পর্যটন রিসোর্ট, , ভিহামানফুশিতে কুরুম্বা নামক আইল্যান্ডে খোলা হয়।যার নাম এখন হচ্ছে কুরুম্ভা রিসোর্ট।
আজ সেই দিন মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পের ৫০ বছর পূর্তি।
এখন মালদ্বীপে ১০০ টিরও বেশি রিসোর্ট, ৮০০ এর বেশি গেস্টহাউস এবং ১০০ টিরও বেশি সাফারি বোট সহ মালদ্বীপ এখন বিশ্বের একমাত্র প্রথম পর্যটন গন্তব্য৷
পর্যটন শিল্পটি মালদ্বীপের অনেক কাঠামোগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এনেছে।

প্রথমে হোসেন আফিফ, আহমেদ নাসিম, জর্জ করবিন এবং মোহাম্মদ উমর মানিক। (ছবি/এমএটিআই/২০২২
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট গত জুলাই মাসে ৩ অক্টোবরকে জাতীয় পর্যটন দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। দিনটি ১৯৭২ সালে কাফু অ্যাটলের ভিহামানফুশি দ্বীপে, কুরুম্বা গ্রামের প্রথম রিসোর্টের উদ্বোধনী দিনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মালদ্বীপে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে ।
মালদ্বীপে ১ম জাতীয় পর্যটন দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ বলেছেন যে গত চার বছরে মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পে হাজার হাজার নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এএনবি২৪ ডট নেট’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।