আজ দিবাগত রাত পবিত্র শবে কদর,এ রাতটি চেনার কিছু আলামত

গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির

।।

আজ ৬ এপ্রিল, শনিবার দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। এই রাত প্রত্যেক রোজাদার মুসলমানের নিকট  অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত। প্রতিবছর পবিত্র রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে শবে কদর পালন করা হয়। এরাতটি প্রত্যেক মুমিন মুসলমান ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করবেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ রাতটি  নফল নামাজ,তছবি,তাহলিল, কোরআন তেলাওয়াত ও দরূদ শরিফ পাঠের মাধ্যমে কাটাবেন। বিগত দিনের ভুল- ত্রুটি, গোনাহ্ খাতা মাফ চাইবেন মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে।

ইসলাম ধর্ম অনুসারে, এ রাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই মুসলমানদের কাছে এ রাত অতীব পুণ্যময় ও মহিমান্বিত। ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাত কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে অধিকাংশ আলেম- ওলামাদের  অভিমত। শবে কদরের এই রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয় এবং এই রাতকে কেন্দ্র করে কোরআনে ‘আল-কদর’ নামে একটি সুরাও নাজিল করা হয়।

‘শবে কদর’ কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত।

ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, অন্যান্য সময়ে এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, শবে কদরের রাতের ইবাদতে তার চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও নিজেদের গুনাহ মাফ এবং অধিক সওয়াব হাসিলের আশায় নফল ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত ও জিকির- আজকারের মধ্য দিয়ে রাতটি অতিবাহিত করবেন।

লাইলাতুল কদর চেনার কিছু আলামত:

মাহে রমজানের  শেষ দশক নাজাতের  বেজোড়  রাতগুলোতে  মহিমান্বিত  রজনীটি  তালাশ  করেন ধর্মপ্রাণ মুমিন মুসলমানগণ। 

যা হাজার  মাসের  চেয়েও উত্তম  রাত।  জীবনে একবার  সঠিকভাবে  রাতটি  পেয়ে  গেলে আজীবনের  সাওয়াব  যেন  পেয়েই  গেলেন। বান্দার  জন্য স্রষ্টা কর্তৃক  এরচেয়ে  বড়  অফার  আর  কী  হতে পারে ?  হাদীস  শরীফে  এ  লাইলাতুল কদর  রাতের কিছু  আলামত  বর্ণিত  হয়েছে। আসুন  সেগুলো  দেখে রাতটি  মিলিয়ে  নেই। (১) রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না। 

(২) নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না। 

(৩) মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।

(৪) সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।(৫) কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন। (৬) ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণও হতে পারে। 

(৭) সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত।  (মুত্তাফাকুন আলাইহ)

আর  যদি  রাতটি  পেয়েই  যান  তো  সে  রাতের একটি  বিশেষ  দোয়াও  রয়েছে  যেটা  উম্মুল  মু’মিনীন হযরত  মা  আয়িশা  সিদ্দিকা  রাদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহা  লাইলাতুল ক্বদর  সম্বন্ধে  জিজ্ঞাসা  করেছিলেন,  হে আল্লাহ রাসুলুল্লাহ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমি  যদি  লাইলাতুল কদর  পাই  তখন কী  করব ?  তখন  রাসূল  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম  মত  দেন, তুমি বলবে, উচ্চারণঃ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন কারীম তুহিব্বুল আ’ফওয়া, ফা’ফু আন্নী।

অনুবাদঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন।  (তিরমিযি, ইবনে মাজাহ ২/১২৬৫)

শবে কদর উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ওয়াজ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ বাদ জোহর নামাজের পর শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য আলোচনা, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

শবে কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি  মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে পবিত্র শবে কদরের রাতে দেশের অব্যাহত অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।

লেখক: ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, সাংবাদিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক, চেয়ারম্যান -গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।