কুমিল্লা শহরে ১০০ টাকা নিয়ে আসা নাছিমা এখন কোটিপতি

নিউজ ডেস্ক রিপোর্ট ।

স্বামী হারানোর পর দিশেহারা হয়ে পড়েন নাছিমা খানম। এরপর মাত্র ১০০ টাকা হাতে চার সন্তান নিয়ে কুমিল্লা শহরে আসেন। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে বিক্রি করেছেন শরীরের রক্ত। মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে সংগ্রহ করেছেন ব্লাউজ ও পেটিকোটের কাপড়। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে একপর্যায়ে যুব উন্নয়নে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেন। এতেই ঘুরেছে নাছিমার ভাগ্যের চাকা। এখন তিনি কোটিপতি।

কুমিল্লার সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন আমাদের ফেইসবুক পেইজ।

কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর হাজি প্লাজার দ্বিতীয় তলায় জুলি লেডিস টেইলার্সে কথা হয় নাছিমা খানমের সঙ্গে। তিনি জানান, অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ১৯৮৩ সালে বিয়ে হয় দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের সিংগুলা গ্রামের মতিউর রহমান প্রধানের সঙ্গে। পাশের গ্রাম গোবিন্দপুরে ছিল নাছিমার বাবার বাড়ি। তার বাবার নাম খলিল খান। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আর বাড়ি ফেরেননি। দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে নাছিমা খানম ছিলেন দ্বিতীয়।

কুমিল্লার সবশেষ খবর পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল টি সাবস্ক্রাইব করুন

১৯৮৮ সালে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় স্বামী মতিউর রহমান প্রধানকে। ওই সময়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন নাসিমা। বড় ছেলের বয়স ছিল ৫ বছর। মেজো ছেলের ৪ আর ছোট ছেলের বয়স ছিল এক বছর। তখন তিন সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর ঠাঁই হয়নি শ্বশুরবাড়িতেও। অবশেষে সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিলেন বাবার বাড়িতে। এর মাঝে চার নম্বর ছেলের জন্ম হয়েছে। বছর দুয়েক যাওয়ার পর সেখানে থাকাও থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে যোগাযোগ করেন কুমিল্লা নগরীতে বসবাসকারী মাজেদা বেগম নামে দূরসম্পর্কের এক খালার সঙ্গে। তার পরামর্শে বাবার বাড়ির কাউকে কিছু না বলে ভোরে রওয়ানা দেন কুমিল্লা শহরের উদ্দেশ্যে। ওই সময় তার কাছে ছিল মাত্র ১০০ টাকা। ৫০ টাকার বিনিময়ে একটি ট্রাকে চড়ে সন্তানদের নিয়ে কুমিল্লায় পৌঁছান তিনি। বাকি ৫০ টাকা নিয়ে মাজেদা খালার ঠিক করে দেওয়া হাউজিংয়ে ছোট্ট একটি বাসায় ওঠেন চার সন্তান নিয়ে। সালটা ছিল ১৯৯০। শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি ও খাবারের জন্য বিক্রি করেছেন শরীরের রক্ত। প্রতি ব্যাগ রক্ত বিক্রি করতেন ২০০ টাকায়। ১৫ থেকে ১৬ ব্যাগ রক্ত বিক্রি করেন তিনি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন ব্যাগ রক্ত দিয়ে জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে পড়তে হয়েছে নাছিমা খানমকে। পরবর্তীতে মাজেদা খালা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা কলে অপারেশন রুমে সহকারী হিসেবে বেসরকারিভাবে কাজ করান সুযোগ করে দেন। পর্যায়ক্রমে নগরীর ঠাকুরপাড়ায় যুব উন্নয়ন থেকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে বাসায় বসে শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ।

প্রথমদিকে কাজ না পাওয়ায় ব্লাউজ-পেটিকোট সেলাইয়ের জন্য বাসায় বাসায় গিয়ে চেয়ে কাপড় আনতেন। তাদের বলতেন, সেলাই ভালো হলে টাকা দেবেন। এই শর্তে মানুষও কাজ দিতে শুরু করে। রাত জেগে কাজ করতেন তিনি। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন বড় ছেলে। কিন্তু সন্তানদের খাবার জোটাতে হবে এই ভেবে তিনি শরীরে ক্লান্তি আনতেন না। বিরামহীন দিন-রাত চালিয়ে গেছেন সেলাইয়ের কাজ। চার সন্তানের আহারের জোগান দিতে না পেরে তিনি খেয়েছেন ভাতের মাড় আর সন্তানদের দিয়েছেন ভাত। এর মাঝে পরিচয় হয় এক নারী সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে। জরুরিভাবে একটি ব্লাউজ সেলাই করতে দেন তাকে। ডেলিভারি দেওয়া সেই ব্লাউজটি পছন্দ হয় ওই নারীর। পরবর্তীতে তাকে উৎসাহ দেন টেইলার্সের দোকান দিতে। লাজুক নাছিমা চিন্তাই করতে পারেনি মার্কেটে গিয়ে সেলাইয়ের কাজ করবেন। একদিকে অর্থনৈতিক দৈন্যদশা অন্যদিকে সামাজিক লাজ। একপর্যায়ে ছেলেদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন দোকান দেওয়ার। বড় ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন ভাড়া দোকান খুঁজতে। খালি হাতে ভয়ে ভয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে দোকান দেখেন। একপর্যায়ে কুমিল্লা নিউ মার্কেটে আমিন টেইলার্স নামে একটি দোকানের সাটার বন্ধ দেখেন। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, দীর্ঘদিন ধরে দোকাটি বন্ধ। খোঁজ নিয়ে জেলা স্কুল রোডে দোকানের মালিক অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের বাসায় যান মা-ছেলে। বলেন জীবনবৃত্তান্ত। তাদের দুঃখের কথা শুনে কোনো অগ্রিম ছাড়াই দোকানের চাবি দিয়ে দেন নাছিমার হাতে। মা-ছেলে মিলে পরিষ্কার করে রং করেন দোকান। সেখানে আগে থেকেই মেশিন ও কাটিং টেবিল থাকায় মাত্র একটি কাঁচি আর ফিতা নিয়ে শুরু হয় নাছিমার নতুন অধ্যায়। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই সময়ে শহরের একমাত্র নারী দর্জি ছিলেন নাছিমা। বর্তমানে নগরীর মনোহরপুর হাজি প্লাজার দ্বিতীয় তলায় ও রেসকোর্স এলাকায় ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজায় দুটি টেইলার্সের দোকান আছে তার। এছাড়া ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজায় আরও দুটি থান কাপড়ের দোকান আছে নাছিমার। চারটি দোকানে ১৫ জন কর্মী কাজ করেন।   এই দোকানের আয় থেকে কুমিল্লা শহর ও গ্রামের বাড়িতে জমি কিনেছেন নাছিমা। বর্তমানে তার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। আয়ের একটি অংশ মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা ও দরিদ্রদের দান করেন তিনি। ২৫০ জনের বেশি বেকার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন সেলাইয়ের। তারাও এখন স্বাবলম্বী।   নাছিমা চার ছেলে মধ্যে দুইজনকে এইচএসসি আর এক ছেলেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করিয়েছেন। তারাও সময় দেন মায়ের গড়া প্রতিষ্ঠানে। আর ১০ বছর বয়সে এক ছেলে মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়।   নিজের সংগ্রামের গল্প শেষে নাছিমা বললেন, সুন্দর ব্যবহার, ধৈর্য ও সততা থাকলে যে কোনো ব্যক্তি ব্যবসায় সফলতা লাভ করবে। তার স্বপ্ন বিধবা ও দুঃস্থ নারীদের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান করা। যেখানে নারীরা কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। তার এই ধন-সম্পদের জন্য তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন এবং দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন।

সূত্রঃ জাগোনিউজ

প্রকাশকঃএম এইচ, কে , উপদেষ্টা সম্পাদক,জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃনির্বাহী সম্পাদকঃ বার্তা সম্পাদকঃ সাইদুর রহমান মিন্টু এএনবি২৪ ডট নেট নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে । তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি anb24.net is one of the most popular Bangla News publishers. It is the fastest-growing Bangla news media that providesective news within the accurate and obj shortest poassible time.anb24.net intends to cover its reach throughout every district of the country, also global news of every segment such as politics, economics, sports, entertainment, education, information and technology, features, lifestyle, and columns anbnewsbd@gmail.com /mahamudulbd7@gmail.com mahamudul@anb24.net